Episode 8318 words1 views

অষ্টম অধ্যায়: অন্বেষণ

রাতুল বুঝতে পারলো, চায়ের দোকানদারের গল্পটা সম্পূর্ণ ছিল না। অমিশা বলি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কালীপদর কী হয়েছিল, সেটা কেউ জানে না। সে হয়তো পালায়নি। সে হয়তো সফল হয়েছিল। পরদিন সে আবার সেই চায়ের দোকানে গেলো। বৃদ্ধ তাকে দেখে একটু অবাক হলেন। "কী বাবু, আবার?" "দাদু, কালীপদ সাহার সম্বন্ধে আর কিছু জানেন? তার কোনো আত্মীয়স্বজন? বা সে কোথা থেকে এই তন্ত্রসাধনা শিখেছিল?" বৃদ্ধ একটু ভাবলেন। "আত্মীয়স্বজনের কথা জানি না। তবে আমার বাবা বলতো, লোকটা নাকি শ্মশানে-মশানে ঘুরে বেড়াতো। বিশেষ করে কালীঘাটের মন্দিরের পেছনে, আদি গঙ্গার ধারে, এক কাপালিকের ডেরায় তার খুব যাতায়াত ছিল।" "এখনও আছে সেই ডেরা?" "তা কী করে বলি বাবু! সে তো সত্তর-আশি বছর আগের কথা। তবে আদি গঙ্গার ধারে শ্মশানও আছে, সাধু-সন্ন্যাসীরাও আছে। খুঁজে দেখতে পারেন।" রাতুল আর দেরি করলো না। বাইক নিয়ে সোজা চলে গেলো কালীঘাট। মন্দিরের ভিড় এড়িয়ে সে চলে গেলো আদি গঙ্গার ধারে, কেওড়াতলা মহাশ্মশানের দিকে। শ্মশানের ধোঁয়ায় আকাশটা ধূসর। চারদিকে মন্ত্রপাঠ, কান্নার শব্দ। রাতুল ঠিক বুঝতে পারছিল না সে কাকে খুঁজবে। একপাশে সে দেখলো, এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক বসে চিতা সাজানোর কাঠ মাপছেন। পরনে ময়লা ধুতি, খালি গা। রাতুল তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। "এখানে কোনো পুরনো কাপালিকের ডেরা চেনেন?" ভদ্রলোক তার দিকে না তাকিয়েই বললেন, "কাপালিক এখন আর নেই। সব শ্মশান-ব্যবসায়ী।" "আমি কালীপদ সাহা নামে একজনকে খুঁজছি। সত্তর-আশি বছর আগে সে এখানে আসতো।" ভদ্রলোক কাঠের কাজ থামিয়ে প্রথমবার রাতুলের দিকে তাকালেন। তার চোখ দুটো অদ্ভুত রকমের শান্ত। "কালীপদ? 'ছায়া-গ্রাহক' কালীপদ?" রাতুলের শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো। "আপনি... আপনি চেনেন তাকে?" "নাম শুনেছি। আমার গুরুদেবের কাছে শোনা। আমি এই শ্মশানের ডোম। আমার নাম পরান।" পরান ডোম উঠে দাঁড়ালো। "আমার বাবাও ডোম ছিল, তার বাবাও। আমরা বংশপরম্পরায় এই ঘাটের সেবক। কালীপদ আসতো আমার গুরুর বাবার কাছে। তিনি ছিলেন আসল তান্ত্রিক। কালীপদ তার শিষ্য ছিল। কিন্তু বড় উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল লোকটা।" "কী চেয়েছিল সে?" "অমরত্ব," পরান শান্তভাবে বললো। "সে শুধু ছায়া বা আত্মাকে ক্যামেরায় ধরতে চায়নি। সে চেয়েছিল নিজের আত্মাকে ক্যামেরার মধ্যে চালনা করে এক দেহ থেকে অন্য দেহে যাওয়ার ক্ষমতা। সে 'ছায়া-পুরুষ'-এর সাধনা করছিল।"

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion