Episode 9394 words1 views

নবম অধ্যায়: ছায়া-পুরুষের সাধনা

পরান ডোম রাতুলকে শ্মশানের এক কোণে, একটা ভাঙা শিব মন্দিরের চাতালে নিয়ে গিয়ে বসালো। "গল্পটা শোনো," পরান বলতে শুরু করলো। "তন্ত্রমতে, প্রত্যেক মানুষের একটা 'ছায়া-পুরুষ' থাকে। এটা তার আত্মার নেগেটিভ প্রতিচ্ছবি। তুমি যদি সেই ছায়া-পুরুষকে বশ করতে পারো, তাহলে তুমি অসীম ক্ষমতার অধিকারী হবে। কিন্তু এই সাধনা ভয়ঙ্কর। এর জন্য শুদ্ধ আত্মার 'বলি' লাগে। কালীপদ সেই বলির জন্যই অমিশাকে বেছেছিল।" "তাহলে অমিশার আত্মা?" "কালীপদ অমিশাকে তার ডার্করুমে বলি দেয়। তার রক্ত দিয়ে একটা বিশেষ যন্ত্র (Yantra) আঁকে। তারপর সে অমিশার সদ্য-মৃত দেহের ছবি তোলে। তার উদ্দেশ্য ছিল, অমিশার আত্মাকে সেই ছবির প্লেটে বন্দী করা। সেই প্লেটটাই হবে তার 'ছায়া-পুরুষ'-এর কারাগার।" "কিন্তু সে তো সফল হয়নি। অমিশার আত্মা তো...?" পরান হাসলো। "সফল হয়েছিল। আংশিকভাবে। সে অমিশার আত্মাকে বন্দী করেছিল। কিন্তু অমিশার আত্মা এতই শুদ্ধ ছিল যে, সেই আত্মা কালীপদর তন্ত্রকে প্রতিহত করে। কালীপদ সেই আত্মাকে ব্যবহার করে নিজের ছায়া-পুরুষকে ডাকতে পারেনি। উল্টে, সেই তন্ত্রের ভুলে কালীপদর নিজের আত্মাই তার দেহ ছেড়ে বেরিয়ে যায় এবং অমিশার আত্মার সাথে ওই ডার্করুমে, ওই ক্যামেরার ভেতর আটকে পড়ে।" রাতুল বললো, "কিন্তু আমি তো অমিশার ছায়া দেখেছিলাম।" "হ্যাঁ," পরান বললো। "তুমি যা দেখেছো, তা অমিশার যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি। সে বারবার তোমাকে সতর্ক করার চেষ্টা করছিল। আর তুমি কী করলে? তুমি একটা অ্যানালগ ক্যামেরার ফ্ল্যাশ দিয়ে অমিশার সেই দুর্বল আত্মাকে ওই কারাগার থেকে 'মুক্তি' দিয়ে দিলে!" "এটা তো ভালোই হয়েছে," রাতুল প্রতিবাদ করলো। "ভালো?" পরান ডোমের চোখ দুটো দপ করে জ্বলে উঠলো। "তুমি একটা খাঁচার দরজা খুলে দিয়েছো। যে খাঁচায় একটা বাঘ আর একটা হরিণ একসাথে বন্দী ছিল। তুমি হরিণটাকে বের করে দিয়েছো। এখন খাঁচার ভেতরে কে একা রাজত্ব করছে?" রাতুল ভয়ে জমে গেলো। "কালীপদ।" "হ্যাঁ। অমিশার আত্মা এতদিন তাকে আটকে রেখেছিল। তুমি অমিশাকে সরাতেই কালীপদর আত্মা এখন মুক্ত। সে তার পুরনো ডার্করুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। সে এতদিন একটা ডিজিটাল সেন্সরে বন্দী ছিল, যা তার অচেনা। কিন্তু এখন সে মুক্ত। এবং সে তার পুরনো সাধনা শেষ করতে চায়।" "কী চায় সে?" "একটা নতুন দেহ। একটা ফটোগ্রাফারের দেহ। যে রাতের অন্ধকারকে ভালোবাসে। যে ছায়াকে বোঝে।" "আমার দেহ," রাতুল বুঝতে পারলো। "তোমার ডিজিটাল ক্যামেরাটা সে ধ্বংস করেছে কারণ ওটা ছিল তার নতুন জেলখানা। তোমার অ্যানালগ ক্যামেরাটা সে ভেঙেছে কারণ ওটা অমিশাকে মুক্ত করেছে। এখন তার আর কোনো বাধার নেই। সে তোমাকে 'দখল' করবে।" "উপায় কী?" রাতুল প্রায় কেঁদে ফেললো। "আমায় বাঁচান!" পরান ডোম কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বললো, "উপায় একটা আছে। খুব কঠিন। কালীপদর আত্মাকে তার মূল উৎসে ফিরিয়ে দিতে হবে। যেখান থেকে তার শুরু, সেখানেই তার শেষ।" "সেই ডার্করুম?" "হ্যাঁ। 'ছায়াপথ স্টুডিয়ো'।"

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion