Episode 10283 words3 views

দশম অধ্যায়: দেবীর রত্ন

তারা সুড়ঙ্গ দিয়ে ফিরে এলো। শম্ভু জ্যাঠা আহত অবস্থায় পড়ে আছেন। তার মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে। লোকগুলো তাকে মেরে দিঘির পাঁকের মধ্যে ফেলে দিয়ে সুড়ঙ্গের ভেতরে ঢুকেছে। "জ্যাঠা!" অর্ক ছুটে গেলো। "আমি ঠিক আছি, বাবু," শম্ভু জ্যাঠা হাসার চেষ্টা করলেন। "ওরা সুড়ঙ্গে ঢুকেছে... ওই পাঁকেই ওদের কবর হবে। যান, আপনি আপনার কাজ শেষ করুন।" অর্ক আর অনিমেষবাবু শম্ভু জ্যাঠাকে ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে এলেন। তারপর সোজা ঠাকুরঘরে। "স্ল্যাবটা আবার সরাতে হবে," অর্ক বললো। তারা দুজনে মিলে স্ল্যাবটা সরালো। আবার সেই গোপন কুঠুরি। "ঈশ্বরচন্দ্রের চিঠিটা," অনিমেষবাবু বললেন। "'আমার আত্মা এই পুঁথিকে পাহারা দেবে'।" "আত্মা নয়," অর্ক বললো। "তিনি নিজেকেই এখানে বন্দী করেছিলেন। তিনি খুন হননি... তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন।" "কী বলছেন!" "হ্যাঁ। বীরেন্দ্রনারায়ণের প্রপিতামহ যখন তার পরিবারকে খুন করে মূর্তিটা কেড়ে নিতে আসে, তখন ঈশ্বরচন্দ্র এই ঘরে ঢুকে নিজেকে বন্দী করে ফেলেন। যাতে ওই লোকটা দেবীর রত্ন কোনোদিন খুঁজে না পায়। তিনি এই ঘরেই না খেতে পেয়ে মারা যান।" অর্ক টর্চ জ্বেলে ঘরটা ভালো করে দেখলো। এক কোণে একটা ছোট ফোকর। "এই দেখুন," অর্ক বললো। "এই ফোকরটা সোজা রান্নাঘরের চিমনি দিয়ে বাইরে গেছে। বাতাস আসার জন্য। আর ওই দেখুন... একটা মাটির কলসি। তাতে জল ছিল। আর এক কোণে... একটা কঙ্কাল।" অনিমেষবাবু ভয়ে শিউরে উঠলেন। "কিন্তু রত্নটা কোথায়?" অর্ক সেই প্রথম পুঁথিটা হাতে নিলো। "দেবীর ব্রতকথা"। "তিনি লিখেছিলেন, তিনি রত্নটা লুকিয়ে রেখেছেন।" অর্ক পুঁথিটার পাতাগুলো ছিঁড়তে শুরু করলো। "কী করছেন!" অনিমেষবাবু আঁতকে উঠলেন। "বিশ্বাসঘাতক! সে আমার রক্তে তার লোভের তর্পণ করলো।" অর্ক বিড়বিড় করলো। "তিনি এই পুঁথিটা তার নিজের রক্ত দিয়ে লিখেছেন! এই পুঁথিটাই আসল।" পুঁথিটার তালপাতাগুলো আসলে একটা খোলস। তার ভেতরে, একটা গর্ত করে রাখা। আর সেই গর্তের ভেতরে... একটা প্রকাণ্ড, কালো পাথরের মূর্তি। অষ্টধাতুর নয়। কিন্তু মূর্তির চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। দুটো বিশাল হীরা। আর মূর্তির নিচে, সেই জং ধরা ছোরাটা। ঈশ্বরচন্দ্রের শেষ চিহ্ন।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion