Episode 7313 words3 views

সপ্তম অধ্যায়: দ্বিতীয় সূত্র

বাক্সটা খুলতেই একটা তীব্র কর্পূর আর চন্দনের গন্ধ বেরিয়ে এলো। ভেতরে একটা ছোট রুপোর মূর্তি। এক দেবীর মূর্তি, কিন্তু তার হাতে কোনো অস্ত্র নেই, আছে একটা বীণা। "এ তো মা সরস্বতী!" অনিমেষবাবু বললেন। "না," শম্ভু জ্যাঠা বললেন। "ইনি হলেন দেবী 'ব্রহ্মাণী'। মা সরস্বতীরই তান্ত্রিক রূপ। আমাদের বংশের কুলদেবী। এই মূর্তিই তো ঈশ্বরচন্দ্রের ঠাকুরমা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু এই মূর্তি তো ঠাকুরঘরে ছিল। এখানে কী করে এলো?" মূর্তির নিচে একটা ভাঁজ করা কাগজ। অর্কর প্রপিতামহ ঈশ্বরচন্দ্রেরই হাতের লেখা। “ওরা ঠাকুরঘরের প্রধান মূর্তিটা দখল করেছে। কিন্তু দেবীর আসল শক্তি এই ব্রহ্মাণী মূর্তিতে। আমি এটা লুকিয়ে রাখলাম। পুঁথির সংকেত যে ধরতে পারবে, সে-ই এটা পাবে। কিন্তু আসল রত্ন এখনও লুকোনো। এই মূর্তির চোখ তোমাকে পথ দেখাবে। যেখানে চন্দ্র আর সূর্য মিলিত হয় না, সেই গোপন কক্ষে রত্ন অপেক্ষা করছে।” "এর মানে কী?" অর্ক বললো। "মূর্তির চোখ?" সে মূর্তিটা হাতে তুলে নিলো। দেবীর চোখ দুটো অদ্ভুত। দুটো ছোট লাল চুনি পাথর। অর্ক মূর্তিটা ঘোরালো। "দেখুন!" অনিমেষবাবু বললেন। "মূর্তির পেছনে! একটা ছোট্ট ছিদ্র।" অর্ক ছিদ্রটার মধ্যে দিয়ে তাকালো। কিছুই দেখা গেলো না। "আলো দরকার," অর্ক বললো। সে তার আর্কিটেক্টের সরঞ্জামের ব্যাগ থেকে একটা ছোট লেজার পয়েন্টার বের করলো। কিন্তু তাতে কাজ হলো না। তারপর সে মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইটটা মূর্তির চোখের ওপর ফেললো। আর সাথে সাথেই, মূর্তির পেছনের ছিদ্রটা দিয়ে একটা সরু আলোর রেখা বেরিয়ে এলো। "এটা তো লেন্সের মতো কাজ করছে!" অর্ক অবাক হয়ে গেলো। "চুনি দুটোকে উত্তল লেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।" "আলোটা দেওয়ালে ফেলুন," শম্ভু জ্যাঠা বললেন। অর্ক আলোর রেখাটা মন্দিরের ভেতরের দেওয়ালে ফেললো। ধুলোমাখা দেওয়ালে একটা অস্পষ্ট ছবি ফুটে উঠলো। একটা তারা। আর তার নিচে... সেই পোড়োবাড়ির একটা নকশা! "এ তো বাড়ির নকশা!" অর্ক বললো। "কিন্তু এটা তো আমার দেখা নকশার সাথে মিলছে না। এটা... এটা বাড়ির মাটির তলার নকশা! দেখুন, ওই তারাটা হলো ঠাকুরঘর। আর এই লম্বা রেখাটা... একটা সুড়ঙ্গ!" "সুড়ঙ্গটা কোথায় গেছে?" "নকশা অনুযায়ী," অর্ক খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বললো, "এটা গেছে অন্দরমহলের নিচে, একেবারে... একেবারে বাড়ির বাইরের দিঘিটার দিকে! 'যেখানে ছায়া আর জল মিলিত হয়'!"

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion