দেবু-দা ঠিকানাটি দেখে অবাক হলেন। "এটা দগ্ধ বন নয়। এটা তোমার বাড়ি! 'যেখানে আলো প্রবেশ করে না'—সেটা তো পশ্চিমের দহলি ঘর! আর 'রক্ত মিশেছে মাটি আর জলে'... রূপেন কী বলতে চেয়েছেন?"
তারা দ্রুত শোনাপুরের দিকে রওনা হলো।
বাড়িতে ফিরে এসে অর্ণব দেখল, সোমা অসুস্থ। সে ঘন ঘন স্বপ্ন দেখছে, আর মিষ্টির ভাঙা পুতুলটাকে জড়িয়ে ধরে থাকে। মিষ্টিও কেমন যেন চুপচাপ।
অর্ণব ঠাকুমার কাছে গেল। "ঠাকুমা, দহলি ঘরের কুলুঙ্গির ইতিহাসটা আর একটু বলতে পারবে? রূপেন কেন ওই জায়গাটাকেই চন্দ্রিমাকে বাঁধতে বেছে নিলেন?"
ঠাকুমা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। "ওহ, সেই গোপন কথা। রূপেন চন্দ্রিমাকে ভালোবাসতেন। আর এই কুলুঙ্গির ঠিক নিচে ছিল রূপেনের স্ত্রী 'কমলা'র সমাধি। কমলা ছিলেন অসম্ভব শুদ্ধ, শান্ত স্বভাবের। চন্দ্রিমা কমলার প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিলেন। রূপেন জানতেন, কমলার আত্মিক শুদ্ধতা ছাড়া চন্দ্রিমাকে বাঁধা যাবে না। তাই তিনি কমলার সমাধির উপরে ১৪ নম্বর কুলুঙ্গিটি তৈরি করেন। কমলার বিশুদ্ধ আত্মিক বাঁধনই চন্দ্রিমাকে আটকে রাখে। বাঁধন ছিন্ন হলে চন্দ্রিমা প্রথমেই কমলার সমাধিকে অপবিত্র করবে।"
অর্ণব চমকে গেল। 'রক্ত মিশেছে মাটি আর জলে'—এটা কমলার রক্তের পবিত্রতা। 'শ্বেত প্রস্তরের নিচে বাঁধন পূর্ণ হবে'—অর্থাৎ বাঁধন পূর্ণ করতে হবে সেই কুলুঙ্গিটার মেঝেতে।
অর্ণব কুলুঙ্গির ভাঙা ফাটলটি দেখল। ফাটল দিয়ে নিচে কমলার সমাধির শ্বেতপাথরের কিছুটা দেখা যাচ্ছে।
অর্ণব পাথরের ফলকটির কথা ঠাকুমাকে বললেন। "ঠাকুমা, মন্ত্র কোথাও লেখা নেই। মন্ত্রটা 'কণ্ঠে' থাকে। রূপেন চেয়েছিলেন বংশের কোনো শুদ্ধ মন এই মন্ত্র উচ্চারণ করুক। কিন্তু কে সেই 'শুদ্ধ মন'?"
ঠাকুমা চিন্তিত হয়ে বললেন, "রূপেন পুরুষ ছিলেন। তিনি চাইতেন বংশের কোনো নারী, যার মন পবিত্র এবং যার ভালোবাসা তীব্র—সে এই মন্ত্র উচ্চারণ করুক। কিন্তু আমাদের বংশে..."
অর্ণব মিষ্টি আর সোমার দিকে তাকাল। মিষ্টি নিষ্পাপ হলেও শিশু। তার মা সোমা—তার মনের মধ্যে মিষ্টির প্রতি যে তীব্র, নিঃশর্ত মাতৃত্বের আলো, সেটাই কি রূপেনের কাঙ্ক্ষিত 'শুদ্ধ মন'?
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion