এদিকে, ভূতের চতুর্দশীর আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। ১৩ জন শিষ্যের বাঁধন, যা অর্ণবের প্রদীপ জ্বালানোর তাড়াহুড়োয় দুর্বল হয়েছিল, তার মধ্যে একজন মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে। সে হলো ১৩ নম্বর কক্ষের প্রেত, বিমল, যে ছিল একজন শিল্পী ও স্থপতি।
বিমল তার চারপাশের বস্তুর মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে। প্রথমে এটি শুরু হলো সোমার আঁকা স্কেচগুলোতে। স্কেচগুলোর রঙ বিকৃত হতে লাগল। তারপর তা এল মিষ্টির ভাঙা পুতুলটির ওপর।
মিষ্টির ভাঙা পুতুলটি ছিল বিমলের প্রথম লক্ষ্য। বিমল সেই পুতুলের মধ্যে প্রবেশ করে। পুতুলটি রাতের বেলা নিজে থেকেই নড়াচড়া শুরু করল। সোমা আতঙ্কিত হয়ে পুতুলটিকে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিতে চাইল, কিন্তু পুতুলটি আবার ফিরে এল।
এক রাতে অর্ণব দেখল, সোমা ঘুমন্ত অবস্থায় পুতুলটিকে নিয়ে কথা বলছে। "না, না! তুমি আমার বাচ্চাকে নিতে পারবে না! তুমি শিল্পী, তুমি ধ্বংস করো না!"
সোমা তখন বিমলের নিয়ন্ত্রণে। বিমল চাইছিল পুতুলটিকে দিয়ে মিষ্টির কপালে একটি প্রাচীন প্রতীক এঁকে দিতে। এই প্রতীকটি হলো চন্দ্রিমাকে সম্পূর্ণ মুক্তি দেওয়ার রাস্তা। বিমল জানত, সে নিজে মিষ্টিকে স্পর্শ করতে পারবে না, কিন্তু মিষ্টির প্রিয় বস্তুর মাধ্যমে তার উপর প্রভাব ফেলতে পারবে।
অর্ণব দ্রুত লণ্ঠন হাতে ছুটে গেল। সে দেখল, ভাঙা পুতুলটা হাতে নিয়ে সোমা ধীরে ধীরে মিষ্টির বিছানার দিকে এগোচ্ছে। পুতুলের কাঠের চোখ দুটো যেন জ্বলছে।
অর্ণব চেঁচিয়ে উঠল, "বিমল! তুমি মুক্তি পাবে না! তুমি ধ্বংসের কারিগর!"
পুতুলটা হঠাৎ সোমার হাত থেকে ছিটকে মেঝেতে পড়ল এবং দ্রুত অর্ণবের দিকে গড়াতে লাগল। পুতুলের কাঠের হাতগুলো যেন লম্বা হয়ে অর্ণবের পা জড়াতে চাইল।
অর্ণব রূপেনের ডায়েরির একটি পাতা থেকে একটি দুর্বল বাঁধন মন্ত্র মনে মনে আওড়াল: "অন্ধকার, অন্ধকারে ফিরে যা! তোমায় বাঁধলাম আলোয়!" এটা ছিল অপূর্ণ মন্ত্র।
অর্ণবের কণ্ঠস্বর দুর্বল হলেও, মন্ত্রের শক্তি ছিল। ভাঙা পুতুলটি হঠাৎ তীব্রভাবে কেঁপে উঠল, আর তার ভেতর থেকে একটি বিকট, চিকন কণ্ঠস্বর বেরিয়ে এল: "আমাকে আবার বাঁধতে পারবে না! চন্দ্রিমা আসছে! সে সব আলো কেড়ে নেবে!"
পুতুলটি বিস্ফোরিত হলো। বিমলের প্রেতাত্মা পুতুলের ভাঙা টুকরোগুলো দিয়ে একটি ক্ষণস্থায়ী, বিকৃত মানুষের মূর্তি তৈরি করল। মূর্তিটি অর্ণবের দিকে তেড়ে এল।
কিন্তু অর্ণবের মন্ত্রের শেষ কথাগুলো তীব্র হলো। বিমলের আত্মা বিকৃত মূর্তিটির ভেতরে বন্দি হলো, এবং মূর্তিটি ধীরে ধীরে মাটির সাথে মিশে গেল। বিমল আবার ১৩ নম্বর কুলুঙ্গির প্রদীপে ফিরে গেল। অর্ণব দেখল, সেই প্রদীপটা কিছুক্ষণ ধরে অস্বাভাবিকভাবে দুলতে থাকল, কিন্তু নিভল না।
অর্ণব হাঁপাতে হাঁপাতে মেঝেতে পড়ে গেল। সোমা জ্ঞান হারালেন। এই ঘটনা অর্ণবকে শিখিয়ে দিল, শুধু প্রদীপ জ্বালানো নয়, তাকে এই এক বছর ধরে প্রতিটি প্রেতাত্মার গতিবিধির উপর নজর রাখতে হবে।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion