রাত তখন প্রায় বারোটা বেজে পাঁচ মিনিট। সবাই ডাইনিং রুমে রাতের খাবার খাচ্ছিল। চোদ্দো শাকের তরকারি। মিষ্টি মায়ের পাশে বসে আছে। হঠাৎ মিষ্টি চমকে উঠল। তার কাঁধ দুটো নুইয়ে গেল।
"মাসি, ওদিকে কে?" তার কণ্ঠস্বর নিচু, প্রায় ফিসফিসানি।
সবাই তাকাল। মিষ্টি পশ্চিমের দহলি ঘরের দরজার দিকে আঙুল দেখাচ্ছে। ঘরটি অন্ধকার। অর্ণব দেখল, দহলি ঘরের দরজায় একটি বিশাল, লম্বা ছায়া মুহূর্তের জন্য স্থির হলো। এটি কোনো মানুষের ছায়া নয়; এটি যেন ঘন অন্ধকারকে বাতাস থেকে ছেঁকে নিয়ে নিজের অবয়ব তৈরি করছে। এর আকার স্থির নয়, বরং ঘন হচ্ছে এবং দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, যেন একটি কালো, ধোঁয়ার স্তম্ভ।
অর্ণবের শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল। সে দ্রুত উঠে আলো জ্বালাতে চাইল, কিন্তু সুইচে হাত দিতেই অনুভব করল সেখানে যেন বরফ জমে আছে। সুইচটি পুরোপুরি ঠাণ্ডা, যেন বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়নি।
খানিক পরেই বাতাস যেন হঠাৎ থেমে গেল। বাইরের ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক পর্যন্ত বন্ধ। একটি অস্বাভাবিক, চাপ চাপ নিস্তব্ধতা গ্রাস করল বাড়িটাকে। এই নিস্তব্ধতা জীবিত মানুষের জন্য নয়। চারিদিকে হঠাৎ একটা পুরোনো, স্যাঁতসেঁতে মাটির আর পোড়া কয়লার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল।
ঠাকুমা'র মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তিনি আতঙ্কে হাঁপাতে লাগলেন। "১৪ নম্বর... আমি একটা গন্ধ পাচ্ছি... স্যাঁতসেঁতে মাটির আর আগুনের গন্ধ... অর্ণব! তুই কি ১৪টি প্রদীপ জ্বালিয়েছিস?"
অর্ণব অপরাধীর মতো মাথা নিচু করল। "ঠাকুমা, আমি... আমি ১৩টি জ্বালিয়েছিলাম। ১৪ নম্বরটা... কথা বলতে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।"
ঠাকুমা ফুঁপিয়ে উঠলেন। "সর্বনাশ! তুই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রেতটাকে মুক্তি দিলি! ওটা হল 'ছায়া-প্রেত', চন্দ্রিমা ডাইনি। ও আলো সহ্য করতে পারে না, আর যার মধ্যে আলো দেখে, অর্থাৎ নিষ্পাপ জীবন, তাকে নিজের কাছে টেনে নেয়। তোর ভাইঝিকে! ও মিষ্টিকে কেড়ে নেবে!"
কথা শেষ না হতেই বাড়ির সমস্ত আলো বিকট শব্দে নিভে গেল। মেইন ফিউজ বক্সেও হাত দেওয়া যাচ্ছে না। শুধু দহলি ঘরে জ্বলে থাকা ১৩টি প্রদীপের টিমটিম আলো ছাড়া গোটা বাড়ি ঘোর অন্ধকারে ডুবে গেল।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion