Episode 5295 words2 views

৫. প্রেতের খেলা ও আলোর ক্ষয়

অর্ণব আর ঠাকুমা পাগলের মতো ছুটল পশ্চিমের দহলি ঘরের দিকে। ১৩টি প্রদীপের আলো তখন ভয়ের মতো কাঁপছে। প্রতিটি প্রদীপ যেন শেষ নিঃশ্বাস নিচ্ছে, তাদের শিখাগুলো ছোট থেকে আরও ছোট হয়ে আসছে। দহলি ঘরের ভেতরে তখন এক অদ্ভুত খেলা শুরু হয়েছে। ঘরের এক কোণে একটা পুরোনো গ্রামোফোন আপনা আপনি চলতে শুরু করেছে, বাজছে এক বিকৃত, ভুতুড়ে সুর—যেন একটা পুরনো দিনের বাংলা গানকে টেনে লম্বা করে বিকৃত করে দেওয়া হয়েছে। দহলি ঘরে ঢুকতেই অর্ণব দেখল, ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা হঠাৎ শূন্যের কাছাকাছি নেমে গেছে। নিভে যাওয়া ১৩টি প্রদীপের চারপাশে একটা কালো কুন্ডলী তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি প্রদীপের শিখা থেকে যেন জীবনশক্তি শুষে নিচ্ছে কেউ। আলোগুলো মরতে চাইছে। "দ্যাখ অর্ণব! ১৩টি শিষ্যের আত্মা এখন তাদের নেত্রী চন্দ্রিমাকে সাহায্য করছে! আলো নেভাতে পারলে ১৪ জনেই মুক্ত হবে!" ঠাকুমা প্রায় মূর্ছিত হয়ে গেলেন। এরই মধ্যে মিষ্টির মা, সোমা'র, চূড়ান্ত আর্তনাদ শোনা গেল, "মিষ্টি নেই! মিষ্টি বিছানায় নেই!" অর্ণবের হৃৎপিণ্ড যেন থেমে গেল। ছায়া-প্রেত তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ কেড়ে নিতে শুরু করেছে! সে বিদ্যুৎ গতিতে মিষ্টিদের শোবার ঘরের দিকে ছুটল। শোবার ঘরে তীব্র শীতলতা। সে দেখল, জানলার দিকে মিষ্টির একটি ছোট আবছা মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। জানলার কাঁচ ভাঙা। বাইরের ঘন অন্ধকার ঘরের ভেতরে ঢুকে আসছে। মিষ্টির মা সোমা তাকে টেনে ধরার চেষ্টা করছেন, কিন্তু মিষ্টির শরীরে যেন অস্বাভাবিক শক্তি। সোমা বারবার পড়ে যাচ্ছেন, মিষ্টির শরীরের প্রতিটি মাংসপেশি তখন পাথরের মতো কঠিন। সে জানলার ভাঙা অংশের দিকে এগোতে লাগল। বাইরে এক জমাট অন্ধকার, যার ভেতর থেকে একটা শীতল, অস্পষ্ট ফিসফিস শব্দ আসছে। শব্দটা কোনো নির্দিষ্ট ভাষা নয়, যেন হাজার বছরের পুরনো, চাপা আকাঙ্ক্ষার ধ্বনি। "এসো... মিষ্টি... আমার কাছে এসো... তুমিই আলো... আমার পথ... আলো নিভে গেছে... অন্ধকার চিরন্তন..." মিষ্টি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার দিকে পা বাড়াল। তার চোখ দুটো খোলা, কিন্তু কোনো দৃষ্টি নেই—তারা যেন কাঁচের মতো নিষ্প্রাণ। সে তখন আর তার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। অর্ণব বুঝতে পারল, মিষ্টির শরীরের ভেতরের আলোটা কেড়ে নিচ্ছে চন্দ্রিমা।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion