Episode 9257 words2 views

৯. অনুসন্ধান

অর্ণব তার শহরের একটি পুরোনো বইয়ের দোকানে গেল, যা প্রাচীন পুঁথি ও তন্ত্রশাস্ত্রের জন্য পরিচিত। সেখানে তার পরিচয় হলো দেবু-দা'র সঙ্গে। দেবু-দা দেখতে রোগা, চোখে মোটা কাঁচের চশমা, মাথাভর্তি এলোমেলো চুল। তিনি একজন বিদ্বান, কিন্তু খুবই তিক্ত ও সন্দেহপ্রবণ। তিনি বহু বছর ধরে প্রাচীন বাংলা পুঁথি নিয়ে গবেষণা করছেন। প্রথমেই দেবু-দা অর্ণবের কথা বিশ্বাস করতে চাইলেন না। "ভূতের চতুর্দশী? ছায়া-প্রেত? তুমি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, আর এসব আদিম গাঁজাখুরি গল্প নিয়ে আমার কাছে এসেছ?" অর্ণব রূপেন রায়চৌধুরীর জীর্ণ ডায়েরিটি তার সামনে রাখল। বিশেষ করে চন্দ্রিমা ডাইনি ও তার ১৩ শিষ্যের প্রসঙ্গটা। ডায়েরিটা উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে দেবু-দার চোখ স্থির হলো। "চন্দ্রিমা! এ নামটা আমি একটা খুব পুরোনো পুঁথিতে পেয়েছিলাম। সে ছিল কালিকা সাধিকা, কিন্তু তার সাধনা ছিল 'অমঙ্গল কালিকা'র জন্য। সে মানুষের জীবনশক্তি দিয়ে নিজের অমরত্বের পথ খুঁজত।" যখন অর্ণব 'বিস্মৃত কালিকার মন্দির, দগ্ধ বন'-এর কথা বলল, দেবু-দা নড়ে বসলেন। "দগ্ধ বন! ওটা সাধারণ জায়গা নয়, অর্ণব। বহু বছর আগে সেখানে এক ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড হয়েছিল, যখন চন্দ্রিমা তার শিষ্যদের নিয়ে শেষ মহাযজ্ঞের চেষ্টা করছিল। সেই যজ্ঞ রূপেন থামিয়ে দেন। সেই মন্দির এখন বিরান, লোকে বলে সেখানে গেলে কেউ আর ফেরে না।" দেবু-দা প্রথমে যেতে রাজি হননি, কিন্তু রূপেনের ডায়েরির আকর্ষণ তাকে যেতে বাধ্য করল। "শোনো, আমি তোমার এই ভূত-প্রেতের গল্প বিশ্বাস করি না, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি ইতিহাসের রহস্যে। আমি যাব, কারণ এই ডাইনি আর তান্ত্রিকের ইতিহাস আমার দরকার।" পরের দিন, অর্ণব ও দেবু-দা যাত্রা শুরু করল। সোমা কান্নায় ভেঙে পড়ল, কিন্তু মিষ্টি অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল, "কাকু, তাড়াতাড়ি এসো। আমার পুতুলটা আবার নড়ছে।" অর্ণব বুঝতে পারল, ১৪ নম্বর কুলুঙ্গি ছাড়াও ১৩ জন শিষ্যের বাঁধনও আলগা হচ্ছে।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion