Episode 12484 words2 views

একাদশ অধ্যায়: কফিনের চাবিকাঠি

ধর্মতলায় সুব্রত রায়ের অফিসের দরজাটা রাতুল প্রায় ভেঙে ফেলেছিল। রাত তখন দশটা। সুব্রতদা অফিস বন্ধ করে বাড়িই যাচ্ছিলেন। রাতুলের এই বিধ্বস্ত চেহারা, ছেঁড়া জ্যাকেট আর মুখের আতঙ্কের ভাব দেখে তিনি চমকে উঠলেন। "রাতুল! তুই? রিয়া কোথায়? মালবিকা দেবী?" "ধরা পড়ে গেছে," রাতুলের গলাটা ভেঙে এল। "সান্যাল... সান্যাল ওদের তুলে নিয়ে গেছে।" "কী বলছিস!" সুব্রতদা তাকে ধরে ভেতরে নিয়ে এলেন। দরজা বন্ধ করে জল দিলেন। রাতুল কাঁপতে কাঁপতে সবটা বলল। নাচের স্কুল, লকেট, রিয়ার পরিকল্পনা, আর শেষে ওই ভয়ঙ্কর তাড়া। "ওরা রিয়াকে জিম্মি করেছে," রাতুল বলল। "ওরা জানে পেন ড্রাইভ আমার কাছে। ওরা এবার আমাকে ব্ল্যাকমেল করবে।" "কোথায় সেটা?" রাতুল তার জামার ভেতরের পকেট থেকে ঘামে ভেজা রুপোর লকেটটা বের করল। "এটা।" সুব্রতদা লকেটটা হাতে নিলেন। কিছুক্ষণ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখলেন। "এটা সত্যিই একটা মাস্টারপিস। ডমরুর নিচের অংশটা ঘোরালেই ইউ.এস.বি পোর্টটা বেরিয়ে আসে।" তিনি লকেটটা তার ল্যাপটপে প্লাগ ইন করলেন। একটা ড্রাইভ ওপেন হলো। তাতে মাত্র একটা ফোল্ডার। ফোল্ডারের নাম— "দ্য লাউঞ্জ"। ভেতরে শ'খানেক ভিডিও ক্লিপ আর অডিও ফাইল। প্রথম ক্লিপটা প্লে হলো। রাতুল দেখল, "দ্য বেঙ্গল লাউঞ্জ"-এর সেই প্রাইভেট ডাইনিং রুম 'পি-ডি-আর'-এর ভেতরের দৃশ্য। অখিলেশ ঝা বসে আছে। তার সাথে সেই "বড় নেতা", যাকে ভিকি চিনতে পারেনি। সুব্রতদা লোকটাকে দেখেই চমকে উঠলেন। "সর্বনাশ! এ তো স্বয়ং মন্ত্রী আশীষ বর্মণ! রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্বে..." ভিডিওটা সম্ভবত অনন্যার কোনো গোপন ক্যামেরায় তোলা। টেবিলে টাকার সুটকেস। আশীষ বর্মণ বলছেন, "ঝা-সাহেব, মেয়ে পাচারের রুটটা এবার ক্লিয়ার। কিন্তু আমার কমিশনটা..." অখিলেশ ঝা হাসছে। "স্যার, আপনার কমিশন আপনার বেডরুমে পৌঁছে গেছে। অনন্যা... ও খুব ভালো 'খেয়াল' রাখে।" পরের ক্লিপটা আরও ভয়াবহ। অনন্যাকে ব্যবহার করা হয়েছে 'হানি ট্র্যাপ' হিসেবে। মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার, এমনকি বিচারপতিদের ব্ল্যাকমেল করার জন্য এই ভিডিওগুলো তোলা হয়েছে। অনন্যা ছিল অখিলেশ ঝা-এর সবচেয়ে দামী 'টোপ'। "কিন্তু অনন্যা উল্টে ঝা-কেই ব্ল্যাকমেল করতে চেয়েছিল," রাতুল বলল। "না," সুব্রতদা বললেন। "ও ব্ল্যাকমেল করতে চায়নি। ও পালাতে চেয়েছিল। এই ক্লিপটা দেখ।" শেষের ক্লিপটা একটা অডিও ফাইল। অনন্যা আর মালবিকা রায়ের কথোপকথন। অনন্যা কাঁদছিল। "...দিদি, আমি আর পারছি না। আমি এই নোংরামি থেকে বেরোতে চাই। আমি ঝা-এর সব কুকীর্তি রেকর্ড করেছি। এটা আমি মিডিয়াকে দেব। কিন্তু ওরা যদি আমাকে মেরে ফেলে... তাহলে তুমি এটা রাতুল সেনগুপ্তকে দিও। ও একজন সাধারণ লোক, ওকেই আমি বিশ্বাস করি। ওকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।" রাতুল ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। অনন্যা তাকে চিনত না। কিন্তু সে রাতুলের ওই 'সাধারণ' সত্তাটার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। "রাতুল," সুব্রতদা তার কাঁধে হাত রাখলেন। "তুই বুঝতে পারছিস তোর হাতে কী আছে? এটা শুধু একটা পেন ড্রাইভ নয়। এটা একটা টাইম বোমা। এটা অখিলেশ ঝা-কে শুধু নয়, পুরো সরকারটাকে নাড়িয়ে দিতে পারে।" ঠিক সেই মুহূর্তে রাতুলের ফোনে একটা মেসেজ ঢুকল। "UNKNOWN NUMBER". সেই নম্বরটা। যেটা সুইচড অফ ছিল। মেসেজটা খুলে রাতুলের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল। ওটা একটা ছবি। রিয়া আর মালবিকা একটা অন্ধকার ঘরে বন্দি। রিয়ার জ্ঞান ফিরেছে, তার মাথায় ব্যান্ডেজ। ছবির নিচে লেখা: "প্রমাণটা ফেরত দে, না হলে তোর বন্ধুদের ডেড বডি ফেরত পাবি। কাল ভোর পাঁচটা। হাওড়া ব্রিজ। পুবদিকের তিন নম্বর পিলারের নিচে। একা আসবি। পুলিশকে জানালে, এক সেকেন্ডও লাগবে না এদের শেষ করতে।" মেসেজটা এসেছে ইন্সপেক্টর সান্যালের নম্বর থেকে।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion