Episode 4564 words2 views

চতুর্থ অধ্যায়: গুপ্তধনের খোঁজে

অপূর্ব ডায়েরি এবং পেনড্রাইভ নিয়ে কলকাতায় ফিরে এল। তার মনে এক নতুন দৃঢ়তা, এক অদম্য সংকল্প। সে রাধিকার সাথে দেখা করল। রাধিকাকে সব কথা খুলে বলল, তার প্রতিটি শব্দে ছিল এক গভীর আবেগ, তার চোখ দুটো রাধিকার চোখে স্থির। রাধিকা প্রথমে ভয় পেয়েছিল, তার চোখে আবারও সেই আতঙ্ক, যেন সে তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দুঃস্বপ্ন দেখছে। কিন্তু অপূর্বর চোখে সে ভালোবাসা, বিশ্বাস আর এক অদম্য সংকল্প দেখতে পেল। সে অপূর্বর হাত ধরে কেঁদে উঠল, তার চোখের জল অপূর্বর হাতে পড়ল। “আমি তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম, অপূর্ব। কিন্তু ভয় পেয়েছিলাম। আমি জানতাম না এই বিপদ তোমাকে এভাবে জড়িয়ে ফেলবে।” “আর ভয় নেই, রাধিকা। আমরা একসাথে আছি। এখন আমরা একা নই। আমরা এই বিপদ একসাথে মোকাবিলা করব। তোমার বাবা যা চেয়েছিলেন, আমরা তাই করব।” অপূর্ব এবং রাধিকা সিদ্ধান্ত নিল, তারা একসাথে এই রহস্যের সমাধান করবে। পেনড্রাইভটিতে কী আছে, তা তাদের জানতে হবে। কিন্তু পেনড্রাইভটি একটি জটিল কোড দিয়ে সুরক্ষিত ছিল। ডায়েরিতে লেখা কোডটি ছিল একটি ধাঁধা, যা রাধিকার বাবার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছিল, যেন তিনি মৃত্যুর পরেও তাদের পথ দেখাচ্ছিলেন। কোডটি ছিল একটি প্রাচীন বাংলা কবিতার অংশ, যা রাধিকার বাবা তাকে ছোটবেলায় শোনাতেন। কবিতার প্রতিটি অক্ষরের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাগত মান ছিল, যা একটি জটিল গাণিতিক বিন্যাসের সাথে যুক্ত। অপূর্ব তার কোডিং জ্ঞান ব্যবহার করল, আর রাধিকা তার বাবার স্মৃতি থেকে কবিতার লুকানো অর্থ খুঁজে বের করল। রাত গভীর হচ্ছিল, কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু তাদের মনোযোগ ছিল অবিচল। বাইরে থেকে মাঝে মাঝে অদ্ভুত শব্দ আসছিল, যেন কেউ তাদের অ্যাপার্টমেন্টের আশেপাশে ঘুরছে, বা তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ লক্ষ্য করছে। কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পর, যখন বাইরে রাত গভীর হচ্ছে এবং তাদের কফি শেষ, তারা কোডটি ভাঙতে সক্ষম হল। পেনড্রাইভটি খুলতেই তাদের চোখ কপালে উঠল। পেনড্রাইভের ভেতরে ছিল একটি মানচিত্র এবং কিছু বৈজ্ঞানিক ডেটা। মানচিত্রটি ছিল একটি গোপন ল্যাবের, যা রাধিকার বাবা তৈরি করেছিলেন, সম্ভবত মাটির গভীরে কোনো নির্জন স্থানে, যা পৃথিবীর মানচিত্রেও নেই, এবং যার অস্তিত্ব কেউ জানত না। মানচিত্রের কিছু অংশ অস্পষ্ট ছিল, যেন ইচ্ছে করেই মুছে ফেলা হয়েছে, বা কোনো গোপন বার্তা লুকিয়ে আছে। আর ডেটাগুলো ছিল একটি নতুন শক্তির উৎস আবিষ্কারের তথ্য – ‘লুমিনা’। এই শক্তি পরিবেশের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং এটি বিশ্বের জ্বালানি সংকট দূর করতে পারে। কিন্তু ডেটাগুলোর সাথে একটি সতর্কতাও ছিল: ‘লুমিনা’ যদি ভুল হাতে পড়ে, তবে এটি ধ্বংসাত্মক অস্ত্রে রূপান্তরিত হতে পারে, যা পুরো বিশ্বকে ধ্বংস করে দিতে পারে, এক নতুন ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা করতে পারে, যা মানবজাতির অস্তিত্বকেই বিপন্ন করবে। এই আবিষ্কারের পেছনে ছিল ভয়ঙ্কর এক ষড়যন্ত্র। ‘অন্ধকার ছায়া’ নামের সেই ক্ষমতাশালী আন্তর্জাতিক সংস্থা এই শক্তিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছিল – বিশ্বজুড়ে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করতে, এবং যারা তাদের বিরোধিতা করবে, তাদের ধ্বংস করতে। তারা রাধিকার বাবাকে খুন করে এই ডেটা চুরি করতে চেয়েছিল, যাতে তারা ‘লুমিনা’কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে এবং বিশ্বকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। অপূর্ব বুঝতে পারল, সেই কালো সেডান এবং সেই রহস্যময় লোকটি এই সংস্থারই লোক। তারা রাধিকাকে খুঁজছে, কারণ রাধিকার কাছেই সেই পেনড্রাইভটি আছে। এবং এখন, তারা জানে, অপূর্বও এই রহস্যে জড়িয়ে গেছে, তাদের জীবন এখন এক অদৃশ্য শত্রুর হাতে, যারা কোনো কিছুতেই পিছপা হবে না, এবং যারা ছায়ার মতো তাদের অনুসরণ করছে। “আমাদের এই তথ্য সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে,” অপূর্ব বলল, তার গলায় এক দৃঢ়তা। “এটা শুধু দেশের সম্পদ নয়, এটা মানবজাতির ভবিষ্যৎ। আমাদের হাতেই এখন পৃথিবীর ভাগ্য। কিন্তু কীভাবে? ওরা তো আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ জানে।” রাধিকা মাথা নাড়ল। তার চোখে এক নতুন দৃঢ়তা, এক অদম্য সাহস। “তারা আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করছে। তারা আমাদের পিছু ছাড়বে না। আমরা কি তাদের ফাঁদ এড়িয়ে যেতে পারব? আমাদের খুব সাবধানে এগোতে হবে। মনে রেখো, ওরা ছায়ার মতো।”

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion