Episode 11386 words0 views

একাদশ পর্ব: শিষ্য এবং নতুন উদ্দেশ্য

অরূপ এবং আনোয়ার যখন নগেন সাধুর কুটিরে ফিরল, তখন দেখতে পেল অমল রায় সেখানে শান্তভাবে বসে আছেন। তিনি যেন সবকিছুর জন্যই প্রস্তুত ছিলেন। "মিঃ সেন, আপনি বরখাস্ত, অথচ এই রাতে গভীর জঙ্গলে কী খুঁজছিলেন?" অমল রায় শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন। তার হাতে একটি ছোট রেকর্ডিং ডিভাইস। অরূপ বুঝতে পারল, এখন আর লুকানোর সময় নেই। সে ডুবো-মন্দিরের রহস্য, জাদুদণ্ডের তিনটি টুকরো, এবং সিন্দুকের ভেতরে পাওয়া 'নরোত্তম' নামটির কথা অমল রায়কে খুলে বলল। অমল রায় মনোযোগ দিয়ে সব শুনলেন। তার চোখে অবিশ্বাস ছিল না, বরং ছিল অদ্ভুত এক স্বীকারোক্তি। তিনি মৃদু হেসে বললেন, "আমার সংস্থা এই ধরনের 'আনঅ্যালাইনড এনার্জি ইভেন্টস' (Un-Aligned Energy Events) বা অলৌকিক শক্তির ঘটনা ট্র্যাক করে। আমি কেবল নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম। আমি আপনার মতো যুক্তিবাদী অফিসার খুঁজছিলাম, যে পাগলামির মধ্যেও সত্যটা খুঁজে বের করতে পারে।" অমল রায় বললেন, "ভবানী একা ছিল না। তার একজন প্রাক্তন শিষ্য ছিল, যে তার চেয়েও বেশি জ্ঞান এবং ক্ষমতা চাইত। সেই শিষ্যের নাম নরোত্তম মিত্র। নরোত্তম ছিল একজন জাঙ্গাল বংশোদ্ভূত, যাকে ছোটবেলাতেই তার জাতি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার প্রতিশোধের আগুন তাকে ভবানীর কাছে নিয়ে আসে। ভবানী যখন উর্মিলার জন্য দরজা খুলতে চাইল, নরোত্তম তখন সেই দরজা দিয়ে কেবল শক্তি এবং জ্ঞান আনতে চেয়েছিল। মিতালী বসুকে কিছু তথ্য নরোত্তমই দিয়েছিল, যাতে তিনি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রবেশদ্বার খোলার প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করেন। নরোত্তম চেয়েছিল বিজ্ঞান আর জাদুর মিশেল ঘটিয়ে এই শক্তিকে বশীভূত করতে।" নগেন সাধু এবার মাথা তুলে বললেন, "নরোত্তম... আমি সন্দেহ করেছিলাম। সে ছোটবেলা থেকেই ছিল ঈর্ষান্বিত। সে ভবানীর মতো পিতৃত্বের কারণে দুর্বল নয়। নরোত্তম মুক্তি চায় না, সে ধ্বংস চায়। তার উদ্দেশ্য কেবল জাদুদণ্ড ফিরে পাওয়া নয়, সে তার ক্ষমতা দিয়ে এই জাঙ্গাল সম্প্রদায়কে বিলীন করতে চায়। সে বিশ্বাস করে, প্রকৃতি তাকে পরিত্যাগ করেছে, তাই সে প্রকৃতির উপর প্রতিশোধ নেবে।" নগেন সাধু আতঙ্কিত হয়ে বললেন, "নরোত্তম যদি তৃতীয় টুকরোটি নিয়ে যায়, তবে সে প্রবেশদ্বারটিকে এমনভাবে খুলবে, যেখানে কেবল উর্মিলার আত্মা নয়, সেই 'মৃত্যু-ছায়া' সত্তাটি পুরোপুরি পৃথিবীতে চলে আসবে। এই সত্তা একবার এলে আর কেউ তাকে থামাতে পারবে না।" নগেন সাধু বললেন, সেই প্রাচীন জাঙ্গালদের চুক্তি অনুযায়ী, জাদুদণ্ডটি কেবল বিশেষ একটি স্থানে কাজ করতে পারে। সেই স্থানটি হলো জঙ্গলের গভীরে লুকিয়ে থাকা একটি গুপ্ত জলের উৎস—যেখান থেকে জাঙ্গালরা তাদের শক্তির মূল পেত। নগেন সাধু বললেন, "সেই স্থানটির নাম 'অন্ধকূপ'। ওটা জাঙ্গালদের পবিত্রতম স্থান। নরোত্তম সেখানেই যাচ্ছে। আমাদের সময় নেই।" অরূপ তার সাসপেনশন, ধ্রুবর নীরবতা, এবং অমল রায়ের পরিচয়—সব কিছু ভুলে গেল। এখন তার সামনে কেবল একটিই লক্ষ্য: নরোত্তমকে থামানো এবং মৃত্যু-ছায়ার আগমন ঠেকানো।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion