Episode 3340 words0 views

তৃতীয় পর্ব: ভবানীর ট্র্যাজিক রহস্য

জঙ্গল থেকে ফিরে অরূপ সোজা নগেন সাধুর কুটিরে পৌঁছাল। নগেন সাধু একজন মউলি ও ভেষজ চিকিৎসক, যিনি এই অঞ্চলের লোককথা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানেন। সাধু মশাই ধীর, স্থির চোখ নিয়ে তার কথা শুনলেন। অরূপ নগেন সাধুর কাছে মিতালীর পাথরের মূর্তির কথা এবং তার চোখে দেখা সেই 'শান্তি'-র কথা বলল। সাধু মশাই সব শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "মিতালী দেবী খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন, কিন্তু প্রবেশদ্বার তার জ্ঞানের চেয়ে অনেক গভীর, অরূপ। ওটা শুধু একটা দরজা নয়, ওটা এক প্রলোভন, এক অন্ধকার চুক্তি। যে জ্ঞান বা শান্তি চায়, তাকেও পাথর করে দেয়, কারণ অন্য জগতে যাওয়ার একমাত্র পথ হলো মৃত্যু।" অরূপ ভবানীর কথা জানতে চাইল। "ভবানী কি কেবলই ক্ষমতা চায়, সাধু মশাই?" নগেন সাধু এবার একটি গোপন কথা ফাঁস করলেন। তার কণ্ঠস্বরে করুণা ও ঘৃণা মেশানো। "ভবানী জাঙ্গাল ছিল আমাদেরই একজন। সে লোভী ছিল, তবে কেবল ক্ষমতার জন্য নয়। তার লোভ ছিল বিস্মৃতের প্রত্যাবর্তন। ভবানী ছিল তার মেয়ে উর্মিলা-কে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসত। বহু বছর আগে, উর্মিলা জঙ্গলে হারিয়ে যায়। ভবানী তাকে পাগলের মতো খুঁজেছিল, কিন্তু পায়নি। তারপর সে জানতে পারে, উর্মিলার আত্মা নাকি মৃত্যুপুরী বা 'প্রেতলোক'-এ চলে গেছে। ভবানী তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা করে—সে তার জাদুকর্ম দিয়ে সেই প্রবেশদ্বার খুলবে এবং তার কন্যাকে ফিরিয়ে আনবে। এই ট্র্যাজেডিই তাকে জাদুকরে পরিণত করেছে।" অরূপের রাগ কিছুটা নরম হলো। "তাহলে ধ্রুবকে কেন দরকার?" "উর্মিলা এখন প্রেতলোকে বন্দি। প্রেতলোক থেকে আত্মার প্রত্যাবর্তন সহজ নয়। তাকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার জন্য দরকার এমন এক বিশুদ্ধ জীবনশক্তি, যা তার আত্মা এবং এই পৃথিবীর মধ্যে এক নতুন বন্ধন তৈরি করবে। তোমার ভাই, ধ্রুব, একজন পবিত্র মনের যুবক, তার জীবনশক্তি ভবানীকে সেই কাজ করার সুযোগ দেবে," নগেন সাধু ব্যাখ্যা করলেন। "আর মিতালী দেবীর বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়তো প্রবেশদ্বার খোলার প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করেছিল, তাই তাঁর শাস্তি ছিল নীরব নিথর পাথর হওয়া।" নগেন সাধু এরপর অরূপের হাতে সেই শুকনো মহাবিষের লতা তুলে দিলেন। "আজ পূর্ণিমা। ভবানী আজই তার মন্ত্র সম্পূর্ণ করবে। এই লতার ধোঁয়া ভবানীকে সাময়িকভাবে দুর্বল করবে।" তিনি আরও যোগ করলেন, "মনে রেখো, ভবানী জাঙ্গাল ছিল। সে কেবল কালো শক্তি ব্যবহার করেনি, সে তার পিতৃত্বের ক্ষমতা দিয়ে এই দরজা খুলেছিল। তাই তার বিরুদ্ধে লড়তে হলে তোমাকে ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা দিয়েই লড়াই করতে হবে।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion