অরূপ কুটিরে ফিরে ধ্রুবর মেমরি কার্ড পরীক্ষা করল। ল্যাপটপে শেষ ছবিগুলো দেখা গেল: আলোর স্তম্ভ, ভবানীর আবছা কালো রূপ, এবং বিস্ফোরণের আগে ধ্রুবর তোলা নিজের একটি সেলফি।
সেই সেলফিতে ধ্রুব আতঙ্কিত নয়, বরং তার চোখে একটা গোপন ইঙ্গিত ছিল। তার হাতের মুঠোটা শক্ত করে ধরা, যেন সে কিছু ধরে রাখতে চাইছে। ধ্রুবর এই নীরব প্রতিরোধ অরূপকে নতুন করে শক্তি দিল।
অরূপ ছবিটি জুম করল। ধ্রুবর মুঠোর ভেতরে একটি ছোট গাছের পাতা দেখা গেল, যা সুন্দরবনের কোনো গাছ নয়। এর আকৃতিটা ছিল একটি ছয়-পয়েন্ট তারকা-র মতো, যার কিনারাগুলো যেন হালকাভাবে আলোকিত।
অরূপ দ্রুত আনোয়ারকে ডেকে দেখাল। আনোয়ার সেলফিটি দেখেই কেঁপে উঠল।
"ছোটবাবু, এটা মহাপাড়ের তারা পাতা! এটা জঙ্গলের এইদিকে পাওয়া যায় না। এটা প্রবেশদ্বারের প্রহরী বলে পরিচিত। এর ছায়া নাকি অন্য জগতের শক্তিকে বিভ্রান্ত করে," আনোয়ার বলল। "আমার বাবা বলতেন, এই পাতাটা হলো জীবনের প্রতীক, আর মৃত্যু-ছায়া একে ভয় পায়।"
আনোয়ার বলল, তার বাবা বলতেন, যদি কেউ এই পাতা নিয়ে প্রবেশদ্বারের কাছে যায়, তবে সেই পাতাটিই নাকি প্রবেশদ্বারের শক্তিকে এক মুহূর্তের জন্য দুর্বল করে দেয়। ধ্রুব নিশ্চয়ই কোনোভাবে সেই পাতাটি খুঁজে পেয়েছিল এবং শেষ মুহূর্তে সেটা দেখিয়ে অরূপকে বার্তা দিতে চেয়েছিল। এই পাতাটিই ছিল ধ্রুবর শেষ আশা।
নগেন সাধু এই পাতাটির কথা জানতেন না, কারণ এটি জাঙ্গালদেরও একটি অতি গোপন রহস্য ছিল। অরূপ বুঝতে পারল, ধ্রুব তার ফটোগ্রাফারের চোখ দিয়ে আলোর স্তম্ভের রহস্যের মধ্যেই তার প্রতিরোধের পথ খুঁজে বের করেছিল।
"আনোয়ার, তুমি কি এখন ভয় পাবে?" অরূপ জিজ্ঞেস করল। তার চোখে তখন আর কোনো সন্দেহ নেই, শুধু ভাইয়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
আনোয়ার এবার স্থির চোখে বলল, "না ছোটবাবু। ধ্রুববাবু আমার ভাইয়ের মতো। এই সুন্দরবন যেমন রহস্যের, তেমনই বন্ধুত্বের। আজ রাতে আমি নৌকো নিয়ে কাছাকাছি থাকব। যদি কিছু হয়, আমাকে ডাকবেন।" আনোয়ারের কণ্ঠস্বরে জাঙ্গাল সম্প্রদায়ের দৃঢ়তা ফুটে উঠল।
অরূপ প্রস্তুত হলো। তার পকেটে রিভলভার, মহাবিষের লতা, নগেন সাধুর বন্ধনী মন্ত্রের শক্তি এবং ধ্রুবর দেওয়া মহাপাড়ের তারা পাতা-র গোপন রহস্য। আজ তার লড়াই যুক্তির সাথে কুসংস্কারের নয়, বরং ভালোবাসা বনাম উন্মত্ত পিতৃত্বের লোভ।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion