Episode 6273 words1 views

ষষ্ঠ পর্ব: প্রবেশদ্বার বন্ধ

অরূপের শরীরে তখন পাথরের মতো ভারী ভাব। সে কোনোমতে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে গেল। ধ্রুবর নিঃশ্বাস প্রায় থেমে গেছে। ধ্রুবর শরীরের রূপালি আলো তখন প্রায় পুরোটাই স্তম্ভের দিকে চলে গেছে। "ধ্রুব আমার ক্ষমতা নয়, ধ্রুব আমার শক্তি!" অরূপ চিৎকার করল। এই চিৎকার তার ভালোবাসার শক্তি, যা ভবানীর পিতৃত্বের লোভের থেকেও শক্তিশালী। সে তার সার্ভিস রিভলভারটি বের করল। হাত কাঁপছে, কিন্তু তার লক্ষ্য স্থির—আলোর স্তম্ভের ঘনতম কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে সমস্ত শক্তি কেন্দ্রীভূত। সে ট্রিগার টানল। ধাম! গুলির শব্দে যেন সমস্ত জঙ্গল কেঁপে উঠল। বুলেটটি আলোর স্তম্ভের কেন্দ্রে আঘাত হানল। তীব্র বিস্ফোরণ হলো। চারদিকে আলো আর অন্ধকারের এক তুমুল ঝড়। আলোর স্তম্ভটি যেন একটি বিশাল শক্তি প্রবাহ যা মুহূর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। ভবানী এক ভয়ংকর চিৎকারে ভেঙে পড়ল। তার শরীর থেকে নীল আভাটা ছিন্নভিন্ন হয়ে বেরিয়ে গেল। তার চোখে বাবার করুণ আকুতি, কিন্তু অমরত্বের লোভ তাকে শেষ করে দিল। ভবানী তার জাদু-দণ্ড নিয়ে স্তম্ভের দিকে ছুটে যেতে চাইল, কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। তার শরীরটা ধীরে ধীরে পাথরের মূর্তিতে পরিণত হতে শুরু করল। পাথর হওয়ার মুহূর্তে তার চোখে ছিল অপরাধবোধ এবং মুক্তি। আলোর স্তম্ভটি একটি বিশাল কাঁচের পাত্রের মতো ভেঙে গেল। আলোটি নিভে গেল, আর সেই সাথে নিভে গেল ভবানীর ক্ষমতা। কিন্তু অরূপ দেখল, স্তম্ভের ভাঙা অংশের ভেতর দিয়ে একটি রূপালি প্রজাপতির মতো আলো বেরিয়ে এলো। আলোটি একবার ধ্রুবকে ছুঁয়ে, একবার ভবানীর পাথরের মূর্তিকে ছুঁয়ে, ধীরে ধীরে আকাশের দিকে উড়তে শুরু করল—উর্মিলার আত্মা মুক্তি পেল। উর্মিলার আত্মা তার বাবা এবং তার বলিদানের শিকার ধ্রুবকে শেষবারের মতো স্পর্শ করে গেল। অরূপ তার জ্ঞানহীন ভাইকে ধরে কাছে টেনে নিল। তার নিজের শরীর তখন তীব্র ক্লান্তিতে ভারাক্রান্ত, কিন্তু প্রাণে একটা অদ্ভুত শান্তি। সে পাথর হয়ে যাওয়া ভবানীকে দেখল—এক ব্যর্থ পিতা, যে তার সন্তানের জন্য অন্য এক জগৎ ধ্বংস করতে চেয়েছিল।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion