পরের দিন সকালে, অরূপ ও ধ্রুবকে আনোয়ারের নৌকোয় তুলে আনা হলো। ধ্রুবর জ্ঞান ফিরলেও সে দুর্বল ছিল এবং তার চোখে ছিল এক অজানা জগতের প্রতিচ্ছবি।
অরূপ যখন সেই প্রস্তরীভূত অরণ্যে শেষবারের মতো গেল, সেখানে দৃশ্যটা বদলাতে শুরু করেছে। আলোর স্তম্ভ নেই। প্রস্তরীভূত প্রাণী এবং গাছগুলো দ্রুত ক্ষয়ে যাচ্ছে। ভবানী এবং মিতালীর পাথরের মূর্তিও মাটিতে মিশে যেতে শুরু করেছে, যেন প্রকৃতি তার ক্ষত দ্রুত মুছে ফেলতে চাইছে।
অরূপ ভবানীর পাথরের মূর্তিটার কাছে দাঁড়াল। সে মূর্তিটিকে ছুঁতে গিয়ে দেখল, ভবানীর হাতে ধরা জাদু-দণ্ডটি ভেঙে তিন টুকরো হয়ে গেছে। অরূপ দণ্ডটির দুটি টুকরো হাতে নিল, কিন্তু তৃতীয় টুকরোটি খুঁজে পেল না। তৃতীয় টুকরোটি ছিল অত্যন্ত মসৃণ এবং কালো, যেন উল্কাপিণ্ডের অংশ।
তৃতীয় টুকরোটি এমনভাবে উধাও হয়েছে, যেন সেটা কেউ আগে থেকেই নিয়ে গেছে।
অরূপের মনে সন্দেহ হলো। ভবানী হয়তো একা ছিল না। হতে পারে তার কোনো শিষ্য ছিল, যে এই শেষ মুহূর্তে পালিয়ে গেছে। অথবা ভবানী নিজেই তার ক্ষমতা দিয়ে সেই টুকরোটি লুকিয়ে রেখেছে—ভবিষ্যতের জন্য একটি দরজা খোলা রাখার সংকেত।
ধ্রুব সুস্থ হয়ে উঠল, কিন্তু তার ফটোগ্রাফির নেশা চিরতরে চলে গেল। ক্যামেরার লেন্স এখন তার কাছে এক ভয়ঙ্কর প্রবেশদ্বার। আর অরূপ? সে তার যুক্তিবাদী মনকে দূরে সরিয়ে রাখতে শিখল। সে জেনে গেছে, বিজ্ঞানের বাইরেও এক রহস্যলোক আছে।
সুন্দরবনের সেই অঞ্চলটি আজও মানুষের কাছে 'অভিশাপের স্থান' হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়রা বলে, মাঝে মাঝে নাকি গভীর রাতে সেই নিভে যাওয়া আলোর স্তম্ভের জায়গা থেকে ছোট্ট আলোর ঝলক দেখা যায়।
অরূপ জানে, সে কেবল একটা দরজা বন্ধ করেছে, কিন্তু মৃত্যুপুরী আজও এই পৃথিবীর somewhere lurking in the shadows. আর সেই তৃতীয় টুকরো, তা হয়তো কেবল সময়ের অপেক্ষা করছে আরেকবার ফিরে আসার।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion