Episode 9370 words0 views

নবম পর্ব: অবশিষ্ট ছায়া

অরূপ এখন দায়িত্ব থেকে মুক্ত, কিন্তু রহস্য থেকে নয়। বরখাস্ত হওয়ার পর সে তার অফিসে নয়, নগেন সাধুর কুটিরের কাছাকাছি একটি ভাড়া বাড়িতে আশ্রয় নিল। সে লক্ষ্য করল, সেই 'আলো-চক্র'-এর অবশিষ্ট শক্তি এখনো কাজ করছে। ১. শারীরিক প্রভাব: অরূপের মাঝে মাঝে তীব্র জ্বর আসছে এবং রাতে সে কেবল অন্ধকার ম্যানগ্রোভ এবং একটি লাল চোখ-এর স্বপ্ন দেখছে। এই চোখটি যেন তাকে সবসময় দেখছে, বিচার করছে। আনোয়ারের হাতেও একটি অদ্ভুত চাকার মতো কালো দাগ দেখা দিয়েছে, যা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। দাগটি তার চামড়ার গভীরে প্রবেশ করছে বলে মনে হয়। ২. ধ্রুবর নীরব সংকেত: ধ্রুব বেশিরভাগ সময় নীরব থাকে। একদিন রাতে অরূপ দেখল, ধ্রুব ঘুমন্ত অবস্থায় দেওয়ালে নিজের আঙ্গুল দিয়ে এঁকে চলেছে। তার আঙ্গুলগুলো যেন নিজেই চলতে শুরু করেছে। অরূপ টর্চ জ্বেলে দেখল, সেটা কোনো ছবি নয়, ভবানীর ভাঙা ত্রিশূল চিহ্নের প্রতীক! ত্রিশূলটির একটি অংশ ভাঙা, ঠিক যেন দণ্ডের তৃতীয় টুকরোর অনুপস্থিতি বোঝাচ্ছে। ধ্রুবর আঁকা প্রতীকটি যেন তাকে বিপদের বার্তা দিচ্ছে। অরূপ নগেন সাধুর কাছে গেল। সাধু মশাই ধ্রুবর আঁকা প্রতীকটি দেখে চিন্তিত হলেন। "আমি জানতাম, অরূপ, ওটা শুধু একটা দরজা নয়," নগেন সাধু বললেন। "ভবানী যখন প্রবেশদ্বার খুলেছিল, সে আসলে সেই জগতের এক প্রাচীন সত্তা-কে এই পৃথিবীতে টেনে এনেছিল—নাম তার 'মৃত্যু-ছায়া'। জাদুদণ্ড সেই সত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহৃত হতো। দণ্ড ভাঙার ফলে সত্তাটা পুরোপুরি পৃথিবীতে আসতে পারেনি, কিন্তু তার কিছু অংশ এই জঙ্গলে লেপ্টে আছে। এই অংশগুলিই এখন তোমাদের ওপর প্রভাব ফেলছে।" "আর তৃতীয় টুকরো?" অরূপ জানতে চাইল। নগেন সাধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "তৃতীয় টুকরোটা ছিল নিয়ন্ত্রণের চাবি। সেটা না পাওয়া গেলে, মৃত্যু-ছায়ার অবশিষ্ট শক্তি ধীরে ধীরে এই জঙ্গল এবং তোমার ভাইকে গ্রাস করবে। ভবানী হয়তো সেটা অন্য কোনো গোপন জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিল।" তিনি আরও যোগ করলেন, "ভবানী তার মেয়ের জন্য এটা করেছিল, তাই তার লুকানোর জায়গাটা হয়তো এমন কিছু, যা পিতার ভালোবাসার প্রতীক।" অরূপ বুঝতে পারল, তার আর বসে থাকার সময় নেই। তাকে হয় তৃতীয় টুকরোটি খুঁজে বের করতে হবে, নয়তো চিরকালের জন্য ধ্রুবকে হারাতে হবে। ধ্রুবকে জিজ্ঞেস করার শেষ চেষ্টা করল অরূপ। "ধ্রুব, কোথায় লুকিয়ে আছে দণ্ডের শেষ টুকরোটা?" ধ্রুব দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে শুধু ফিসফিস করে বলল, "মাটি... জল... চুক্তি..." তার চোখগুলো তখন ছলছল করছে, যেন তার ভেতরের সত্তা তাকে সাহায্য করতে চাইছে। এই তিনটি শব্দই অরূপকে নতুন পথে চালিত করল। মাটি (জাঙ্গালদের বাসস্থান), জল (সুন্দরবনের নদী), এবং চুক্তি (নগেন সাধুর বলা ভবানীর পূর্বপুরুষদের সাথে করা কোনো প্রাচীন চুক্তি)।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion