পরের দু'দিন অনন্যা আর শুভ পাগলের মতো তথ্য সংগ্রহ করল। তারা ডক্টর রায়ের বাড়ির বাইরে, উল্টোদিকের গলিতে একটা গাড়ির মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকল।
তারা দেখল, বাড়িটা থেকে মিসেস গোমেস খুব কম বেরোন। শুধু বিকেলের দিকে একবার, কাছের চার্চে যান।
আর প্রতি রাতে, ঠিক রাত দশটা নাগাদ, একটা কালো ভ্যান সেই বাড়িতে ঢোকে। ভ্যানটার গায়ে কোনো নাম লেখা নেই, শুধু একটা লোগো—একটা লাল প্লাস (+) চিহ্ন। ভ্যানটার গায়ে লেখা "ক্লিনিক্যাল ওয়েস্ট ডিসপোজাল"।
"একটা স্টুডিওতে ক্লিনিক্যাল ওয়েস্ট কেন?" শুভ তার জুম লেন্স দিয়ে ছবি তুলতে তুলতে বলল।
"কারণ ওটা শুধু স্টুডিও নয়," অনন্যার গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। "ওটা একটা বেআইনি অপারেশন থিয়েটার।"
অনন্যা চ্যাটার্জিকে ফোন করে সব জানাল। ডায়েরির কথা, সার্জারির কথা, ক্লিনিক্যাল ওয়েস্ট ভ্যানের কথা।
চ্যাটার্জি এবার নড়েচড়ে বসলেন। "তানিয়া দেশাই," তিনি নামটা বিড়বিড় করলেন। "আমার প্রথম দিকের কেস। ফাইলটা ধুলো জমতে দেখেছিলাম। ওপর থেকে চাপ আসায় ঠিকমতো তদন্তই করতে পারিনি। ফাইলটা বন্ধ হয়ে যায়। আমার মনে খটকাটা রয়েই গিয়েছিল।"
তিনি একটু চুপ করে থেকে বললেন, "ঠিক আছে। ডায়েরির এন্ট্রিটা একটা শক্ত প্রমাণ। আর এই ভ্যান... আমি দেখছি। এই ভ্যান কোন হসপিটালের সাথে যুক্ত, আমি খোঁজ নিচ্ছি। কিন্তু আপনি ম্যাডাম, এবার একটু থামুন।"
"আপনি ওঁর বাড়িতে রেইড করুন!"
"করব। কিন্তু সময়মতো। আমার ওপরওয়ালার পারমিশন লাগবে। অরিন্দম রায় খুব হাই-প্রোফাইল। আপনি আপাতত ওই বাড়ি থেকে দূরে থাকুন। মনে হচ্ছে, আপনি ঠিক পথেই এগোচ্ছেন। কিন্তু বেশি এগোতে গিয়ে আবার নিজেই খাদে পড়ে যাবেন না।"
কিন্তু অনন্যা আর অপেক্ষা করতে পারছিল না। তার মনে হচ্ছিল, প্রতিটা মুহূর্ত দেরি হয়ে যাচ্ছে। রিয়া হয়তো... রিয়া হয়তো এখনও বেঁচে আছে! হয়তো ওকে ওই বাড়ির মধ্যেই কোথাও...
সেদিন রাতেই সে একটা অদ্ভুত ফোন পেল। প্রাইভেট নম্বর।
"হ্যালো?"
ওপাশ থেকে কোনো কথা এলো না। শুধু একটা যান্ত্রিক ঘড়ঘড় শব্দ। ক্লিক... ক্লিক... ক্লিক...।
"কে? রিয়া?"
ফোনটা কেটে গেল।
একটু পরেই অনন্যার ফোনে একটা এমএমএস ঢুকল।
একটা ছবি। তার নিজের ছবি। আধ ঘণ্টা আগে, তার ফ্ল্যাটের জানলার সামনে দাঁড়িয়ে সে কফি খাচ্ছিল। ছবিটা রাস্তা থেকে তোলা।
অনন্যার রক্ত হিম হয়ে গেল। ওরা তাকে দেখছে। অরিন্দম রায় জানেন, সে কী করছে।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion