বৈশ্বিক চক্রের মিটিং: জুরিখের ঠান্ডা ঘর
জুরিখ, সুইজারল্যান্ডের এক গোপন বিলাসবহুল ভবনে, সিন্ডিকেটের উচ্চ পর্যায়ের বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হলো। সমস্ত সদস্য ছিলেন বিশ্ব অর্থনীতি, রাজনীতি এবং গুপ্তচরবৃত্তির ক্ষেত্রে প্রভাবশালী। তাদের সবার সামনে একটি হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে রণজিৎ চৌধুরীর গ্রেপ্তারের খবর এবং অনির্বাণের ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার ছবি ভেসে উঠল।
বোর্ডের চেয়ারম্যান, লর্ড আর্থার ক্রসিংটন, যার পূর্বপুরুষ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন, শীতল গলায় বললেন, "চৌধুরী ব্যর্থ হয়েছে। সে বিশ্বাস করেছিল, সে নব্য নবাব হবে। কিন্তু সে ছিল একটি দুর্বল চাল মাত্র। এখন আসল আমানত ধ্বংস না হলে, আমাদের আড়াইশো বছরের প্রভাব ধ্বংস হয়ে যাবে।"
সিন্ডিকেটের প্রধান নির্বাহক, ড. জয়া মির্জা (Dr. Zoya Mirza), একজন অসম্ভব বুদ্ধিমতী, শান্ত কিন্তু মারাত্মক নারী, উঠে দাঁড়ালেন। জয়া ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক ক্রিপ্টোগ্রাফি বিশেষজ্ঞ এবং রণজিতের প্রধান কৌশলবিদদের একজন। তিনি এমন এক বংশের উত্তরসূরি, যারা মীর কাসিমের পতনের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নথি জাল করেছিল। তার সঙ্গে ইরার পুরোনো সম্পর্ক ছিল—জয়া একসময় ইরার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টর ছিলেন।
"ডিজিটাল ডেটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও, আসল চর্মপত্রের শারীরবৃত্তীয় সঙ্কেত (Physical Cipher) এখনও ডক্টর রায়ের হাতেই আছে," জয়া বললেন। "সেই সঙ্কেত ছাড়া নবাবের ফর্মুলা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা অসম্ভব। আমি দক্ষিণ এশিয়াতে যাচ্ছি। এবার খেলা অন্য নিয়মে হবে। আমার লক্ষ্য কেবল দলিল ধ্বংস নয়, ডক্টর রায় এবং ইরাকে চূড়ান্তভাবে নির্মূল করা।"
জয়া মির্জা ছিলেন জামাইলের (রণজিতের প্রধান দেহরক্ষী) বড় বোন। ভাইয়ের ব্যর্থতা জয়াকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করেছিল এবং রণজিতের প্রতি তার তীব্র ক্ষোভ ছিল। জয়া তার নিজস্ব গোপন বাহিনী নিয়ে ঢাকা এবং কলকাতার দিকে রওনা দিলেন।
ইরার বাবা ও বিশ্বাসঘাতকতার রক্ত
ইরা যখন ইনস্টিটিউটে নবাবের নথিগুলো নিয়ে গবেষণা করছিল, তখন তার বাবার নিখোঁজ হওয়ার একটি পুরোনো ফাইল খুঁজে পেল। জয়ার পুরনো নোটের সঙ্গে সেই ফাইলের মিল ছিল। ইরার মনে পড়ল, জয়ার একটি প্রিয় উক্তি ছিল, যা নবাবের লিপিকরের সতর্কবার্তার সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিলে যেত: "বিশ্বাসঘাতকতার রক্ত কখনও রং পাল্টায় না।"
ইরা বুঝতে পারল, তার বাবা আসলে জয়ার জন্যই নিখোঁজ হয়েছিলেন, কারণ তিনি রণজিতের চক্রে যোগ দিতে অস্বীকার করেছিলেন। জয়া তার মেন্টর ছিলেন, যিনি তাকে বিশ্বাস ও প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহার করেছিলেন। ইরা নিশ্চিত হলো—জয়া শুধু রণজিতের সহযোগী নয়, সে আরও ভয়ংকর এবং তার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য আছে।
ইরা অনির্বাণকে নবাবের কৌটার ভেতরের স্ক্রোলের সতর্কবার্তার কথা বলল। "ডক্টর রায়, আল-কুতুব সতর্ক করেছিলেন, 'যে তোমার পথ দেখাবে, সে হয়তো তোমার দিকে ছুরিও তাক করতে পারে।' আমার মেন্টর জয়া মির্জাই আমাকে রণজিতের কাছে নিয়ে এসেছিল। সেই রক্ত এখন আমার খোঁজে আসছে।"
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion