রাতের অন্ধকারে আক্রমণ
ইনস্টিটিউট উদ্বোধনের ঠিক এক সপ্তাহ পর, গভীর রাতে জয়া মির্জার বাহিনী ইনস্টিটিউটে হামলা চালাল। তাদের কৌশল ছিল ভিন্ন—কোনো সরাসরি যুদ্ধ নয়, বরং একটি সাইবার এবং সাইলেন্ট অপারেশন। জয়া তার টিমকে নিয়ে ইনস্টিটিউটের প্রধান সংরক্ষণাগারে পৌঁছাল, যেখানে নবাবের মূল চর্মপত্র এবং অন্যান্য নিদর্শন রাখা ছিল।
ইরা এবং অনির্বাণ তখনো গবেষণা কক্ষে কাজ করছিলেন। ইরা তার উন্নত তাপীয় সেন্সরে ভবনের তাপমাত্রা এবং বাতাসের প্রবাহে একটি অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করল।
"ডক্টর রায়, আমরা একা নই," ইরা ফিসফিস করে বলল। "দরজার লকগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য চুরি নয়, বিনাশ। তাদের লক্ষ্য চর্মপত্রটি।"
জয়ার দল সংরক্ষিত কক্ষের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকল। জয়ার হাতে ছিল একটি বিশেষ লেজার ডিভাইস, যা মুহূর্তের মধ্যে চর্মপত্রের ওপর থাকা এনক্রিপ্টেড কালিকে ধ্বংস করতে পারত।
অনির্বাণ এবং ইরা দ্রুত সংরক্ষণাগারে পৌঁছালেন। জয়াকে দেখে ইরা থমকে গেল।
"ইরা," জয়া শান্ত গলায় বলল। "আমি আশা করিনি তুমি এখানে থাকবে। তোমার বাবার মতো তুমিও ইতিহাসের আবর্জনা নিয়ে পড়ে আছো। নবাবের সত্যকে বাঁচানোর চেষ্টা করো না। এটি কেবল ক্ষমতা বাড়ানোর একটি অস্ত্র।"
অনির্বাণ বুঝতে পারলেন, এই নারী রণজিতের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। তিনি দ্রুত চর্মপত্রটি তুলে নিয়ে দৌঁড়ালেন। জয়ার দল তাদের পিছু নিল।
একটি সংক্ষিপ্ত হাতাহাতির পর অনির্বাণ এবং ইরা একটি গোপন বায়ুচলাচল পথ দিয়ে ইনস্টিটিউট থেকে বেরিয়ে এলেন। কিন্তু জয়া তাদের পিছু ছাড়লেন না।
হাতির দাঁতের খন্ড: শেষ চাবির সন্ধান
পালানোর সময় অনির্বাণ দেখলেন, চর্মপত্রের একটি কোণ জয়ার লেজার ডিভাইস সামান্য পুড়িয়ে দিয়েছে। যদিও তথ্য অক্ষত ছিল, কিন্তু তার ভেতরের দ্বিতীয় স্তরের ফিজিক্যাল সঙ্কেত (Secondary Physical Cipher) অ্যাক্সেস করার জন্য একটি চূড়ান্ত কী দরকার ছিল।
অনির্বাণ এবং ইরা একটি পুরোনো, পরিত্যক্ত বন্দরে লুকিয়ে পড়লেন। সেখানেই তারা হাতির দাঁতের খন্ড (Ivory Fragment) পরীক্ষা করলেন, যেটি নবাবের কন্ঠস্বর রেকর্ড করে রেখেছিল। ইরা আল-কুতুবের কৌটার 'রক্তের পথ' এবং হাতির দাঁতের খন্ডটি একসাথে যুক্ত করল।
মীর কাসিমের কন্ঠস্বর একটি পুরোনো ভিএইচএফ ফ্রিকোয়েন্সিতে প্রতিধ্বনিত হলো:
"মোবারক...যদি এই দলিল কখনও লোভীর হাতে পড়ে, তবে মনে রেখো: সূর্য যেখানে প্রথম উঠেছে, সেখানেই চূড়ান্ত সমাধান লুকানো। আমার কন্ঠস্বর ছাড়া সেই সত্য কখনও জ্বলবে না। সোনালী গ্রামই হবে শেষ বিচারালয়। "
"সোনালী গ্রাম!" অনির্বাণ লাফিয়ে উঠলেন। "নবাবের সময় বাংলার প্রথম রাজধানী ছিল সোনারগাঁও (Sonargaon)! সূর্য সেখানেই প্রথম উঠেছে—ঢাকার কাছেই! সেখানেই লুকিয়ে আছে সেই চূড়ান্ত 'কী'—যেটা ছাড়া নবাবের ফর্মুলা কেবল একটি অপূর্ণ চার্ট মাত্র।"
ইরা মানচিত্র দেখে নিশ্চিত করল। সোনারগাঁও প্রাচীন বাংলার এক ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরী, যেখানে লুকিয়ে থাকতে পারে নবাবের কোনো শেষ অনুগত বংশধর অথবা অন্য কোনো গুপ্ত কক্ষ।
"জয়াও এই সঙ্কেত জানে," ইরা বলল। "সোনারগাঁও-ই আমাদের শেষ গন্তব্য।"
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion