গন্তব্য সোনারগাঁও: জয়ার ফাঁদ
অনির্বাণ এবং ইরা একটি পুরোনো মোটরবাইকে করে ঢাকার জনাকীর্ণ রাস্তা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের দিকে যাত্রা করলেন। তারা জানতেন, জয়া তাদের পিছু নেবে। জয়া এবং তার দল একটি হেলিকপ্টার ও উন্নত থার্মাল ক্যামেরা ব্যবহার করছিল।
সোনারগাঁওয়ের প্রবেশপথে অনির্বাণ একটি অদ্ভুত সংকেত পেলেন। কৌটাটি মৃদু কম্পন দিচ্ছে। এটি কোনো তাপমাত্রা বা শব্দ তরঙ্গ নয়। ইরা দ্রুত তার সেন্সরে দেখল—এটি একটি সামরিক ফ্রিকোয়েন্সি, যা তাদের গতিবিধি ট্র্যাক করছে।
"এটা জয়া নয়," ইরা বলল। "এটা জামাইল! ও রণজিতের হয়ে কাজ করত, কিন্তু ওর পারিবারিক নৈতিকতা ওকে হয়তো শেষ মুহূর্তে আটকেছে। জামাইলের কাছে একটি সামরিক এনক্রিপশন চিপ ছিল। সে হয়তো আমাদের সতর্ক করছে।"
ঠিক তখনই তাদের সামনে একটি কালো এসইউভি এসে পথরোধ করল। গাড়ি থেকে নামল জামাইল, কিন্তু এবার তার চোখে ছিল না কোনো কর্তৃত্ব, ছিল এক ধরণের অপরাধবোধ।
"আমি জানি তোমরা সোনারগাঁও যাচ্ছো," জামাইল বলল। "জয়া তোমাদের জন্য সেখানে একটি নিখুঁত ফাঁদ তৈরি করেছে। আমি আমার বোনকে থামাতে পারব না, কিন্তু তোমাদের হয়তো বাঁচাতে পারি। আমার বাবাও সিন্ডিকেটের শিকার ছিলেন। আমার রক্তও বিশ্বাসঘাতক নয়।"
জামাইল অনির্বাণকে সোনারগাঁওয়ের একটি প্রাচীন ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের নকশা দিলেন। "সাত গম্বুজ মসজিদে যে নবাবের সীলমোহর ছিল, তার দ্বিতীয় অংশ এই সুড়ঙ্গের গভীরে লুকানো আছে। শুধু সেই সীলমোহরের দুটি অংশ একসাথে হলেই, নবাবের কন্ঠস্বর চর্মপত্রের আসল সঙ্কেতকে সক্রিয় করতে পারবে।"
কথা শেষ না হতেই জয়া মির্জার হেলিকপ্টার ওপর দিয়ে উড়ে গেল। জয়া তার ব্যক্তিগত চ্যানেল থেকে জামাইলকে লক্ষ্য করে গুলি করার আদেশ দিলেন। "বিশ্বাসঘাতকের রক্ত! তুমি তোমার ভাইয়ের মতো দুর্বল!"
জামাইল দ্রুত অনির্বাণ ও ইরাকে সুড়ঙ্গের দিকে ঠেলে দিলেন। জয়ার গুলি জামাইলের কাঁধে আঘাত করল। জামাইল গুরুতর আহত হয়েও তাদের রক্ষা করার জন্য একটি গ্রেনেড ছুঁড়ে দিয়ে সুড়ঙ্গের প্রবেশপথের দিকে মনোযোগ সরাতে চাইল। এই আত্মত্যাগ অনির্বাণ ও ইরাকে সোনারগাঁওয়ের গোলকধাঁধায় প্রবেশ করার সুযোগ করে দিল।
ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে শেষ সঙ্কেত
সোনারগাঁওয়ের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গটি ছিল অন্ধকার এবং ভেজা। নবাবের সময় এটি যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। অনির্বাণ ও ইরা তাদের হাতের টর্চ জ্বেলে প্রবেশ করলেন।
জয়া তার সৈন্যদের নিয়ে সুড়ঙ্গে প্রবেশ করল। জয়ার হাতে এখন জামাইলের দেওয়া নকশা ছিল না, কিন্তু তার কাছে ছিল আল-কুতুবের এনক্রিপশন ভেদ করার আধুনিক প্রযুক্তি।
সুড়ঙ্গের ভেতরে, অনির্বাণ দেখলেন, নবাবী আমলের স্থাপত্যে পারস্য এবং বাংলার এক অদ্ভুত মিশ্রণ। পথের প্রতিটি বাঁকে ছিল আলোর ফাঁদ, শব্দ-শোষক দেয়াল এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত পাথর।
অনির্বাণ হাতির দাঁতের খন্ডটি বের করলেন। এর ভেতরে থাকা কন্ঠস্বরটি যেন সুড়ঙ্গের নীরবতা ভঙ্গ করে পথ দেখাচ্ছিল।
"...যখন সত্য উন্মোচিত হবে, তখন লোভীরা ধ্বংস হবে। আমার কন্ঠস্বরই হবে তোমাদের শেষ ঢাল..."
সুড়ঙ্গের শেষপ্রান্তে একটি বিশাল, ভাঙা পাথরের দরজা। তার পাশে একটি বেদি। সেই বেদিতে ছিল নবাবী আমলের একটি বিশেষ ধরণের তামার লণ্ঠন (Copper Lantern)। লণ্ঠনের ভেতরে একটি ফাঁকা স্থান।
ইরা আবিষ্কার করল, এই লণ্ঠনটি আসলে নবাবের সীলমোহরের দ্বিতীয় অংশ। নবাব মীর কাসিম জানতেন, একটি সীলমোহর যথেষ্ট নয়। তিনি এটিকে দুটি ধাতব অংশে বিভক্ত করেছিলেন। লণ্ঠনটিকে উল্টো করে ধরতেই তার ভেতরের ফাঁপা অংশটি বেরিয়ে এল।
চলবে....
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion