Episode 13547 words0 views

পর্ব ১৩: Protocol Delta: হাসপাতালের লুকোচুরি

জামাইলের ট্রমা: সামরিক মনের নীরব আত্মসমর্পণ জামাইলকে ঢাকা সেন্ট্রাল মিলিটারি হাসপাতালের এক গোপন কক্ষে, কড়া প্রহরায় রাখা হয়েছে। তার গুলিবিদ্ধ কাঁধের চিকিৎসা চলছে, কিন্তু তার আসল যন্ত্রণা ভেতরে। সামরিক গোয়েন্দা হিসেবে তার সুদীর্ঘ জীবনের কঠোর শৃঙ্খলা, রণজিতের প্রতি অন্ধ আনুগত্য এবং 'বিশ্বাসঘাতকতার রক্ত' থেকে আসা বোনের অপরাধ—এই সব মিলিয়ে তার মন ভেঙে পড়েছে। জামাইল, যিনি এতদিন রণজিতের Protocol Omega-র প্রধান নিয়ন্ত্রক ছিলেন, এখন নিজেই সিন্ডিকেটের চোখে 'বিশ্বাসঘাতক'। হাসপাতালের ঘরে শুয়ে জামাইল বারবার তার বোন জয়া এবং রণজিতের প্রতি তার শেষ কাজগুলোর কথা ভাবছেন। তার সামরিক প্রশিক্ষণ তাকে আবেগহীন থাকতে শিখিয়েছিল, কিন্তু অনির্বাণ ও ইরার সততা এবং নবাবের দূরদর্শিতা তাকে তার জীবনের সব বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করতে বাধ্য করেছে। জামাইল বুঝতে পারলেন, তিনি শক্তি ও শৃঙ্খলার জন্য যাকে অনুসরণ করতেন, সেই রণজিৎ আসলে একজন লোভী এবং দুর্বল ব্যক্তি মাত্র। অনির্বাণ, ইরার সঙ্গে বাইরে অপেক্ষা করছেন। আল-কুতুবের সতর্কবার্তা অনির্বাণকে এখনও ভাবায়: 'যেই হাতে রক্ত লেগে আছে... তাকে বিশ্বাস করো না।' কিন্তু জামাইল যে তাদের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করেছেন, এই সত্য অনির্বাণকে তার গবেষণাভিত্তিক ধারণাকে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করে। রক্ত বংশের পরিচয় হতে পারে, কিন্তু চরিত্র নয়। হাসপাতালের লুকোচুরি ও গোপন সংকেত: ব্যাক-আপ কী সিন্ডিকেট জানত, জামাইল তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার গভীরে প্রবেশাধিকার রাখতেন। জয়া নিশ্চিত ছিলেন, জামাইলের মস্তিষ্কের মেমোরি চিপে সিন্ডিকেটের সমস্ত উচ্চস্তরের যোগাযোগের 'Delta Override Key' বা 'ব্যাক-আপ কী' লুকানো আছে। এটি এমন একটি এনক্রিপশন চাবি, যা Protocol Delta-র প্রতিটি ধাপকে ব্যর্থ করতে পারে। অনির্বাণ এবং ইরা এই কী উদ্ধারের পরিকল্পনা করলেন। হাসপাতালটি সিন্ডিকেটের অনুগত সামরিক কর্মকর্তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ইরা তার ক্রিপ্টোগ্রাফির জ্ঞান ব্যবহার করে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি দুর্বলতা খুঁজে বের করলেন: নবাবী আমলের কিছু স্থাপত্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি একটি প্রাচীন ড্রেনেজ সিস্টেম, যা হাসপাতালের একদম নিচে পর্যন্ত বিস্তৃত। গভীর রাতে, ইরা হাসপাতালের সার্ভার রুমে অনুপ্রবেশ করে জামাইলের ঘরের লাইফ-সাপোর্ট মনিটরে একটি 'ফ্লিকারিং প্যাটার্ন' চালু করলেন। এটি ছিল একটি প্রাচীন মরস-কোড এবং আল-কুতুবের ক্যালিগ্রাফির মিশ্রণে তৈরি সাংকেতিক ভাষা। জামাইল, যার মন তখন আংশিক ট্রমার মধ্যে ছিল, সেই প্যাটার্নটি চিনতে পারলেন। এটি ছিল তার বাবার ব্যবহৃত একটি সামরিক সংকেত। চোখ দিয়ে নীরবে ইশারা করে, জামাইল অনির্বাণ ও ইরাকে একটি সামরিক হ্যান্ড-সিগন্যাল দেখালেন—যা জামাইলের বাম কব্জিতে লুকানো একটি অত্যন্ত ছোট সাব-ডার্মাল মেমরি চিপে সঞ্চিত ডেটার অবস্থান নির্দেশ করে। অনির্বাণ, নিজেকে এক ছদ্মবেশী চিকিৎসা কর্মী হিসেবে সাজিয়ে জামাইলের ঘরে প্রবেশ করলেন। অনির্বাণ তার ঐতিহাসিক জ্ঞান কাজে লাগালেন: নবাবী আমলের সামরিক কৌশল অনুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কখনও শরীরের ভেতরে গোপন করা হতো না, বরং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত স্থানে লুকানো হতো। জামাইলের কব্জির সামান্য উপরে সেই চিপটি ছিল, যা দেখতে একটি পুরোনো কাঁটার দাগের মতো। অনির্বাণ আল-কুতুবের কৌটার তাপমাত্রা-সংবেদক অংশটি জামাইলের কব্জিতে স্পর্শ করলেন। কৌটাটি মৃদুভাবে গরম হয়ে উঠলো। জামাইল তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করলেন, কিন্তু নীরব রইলেন। এই প্রক্রিয়াটি চিপ থেকে সমস্ত এনক্রিপ্টেড ডেটা সরাসরি আল-কুতুব কৌটাতে স্থানান্তরিত করল—যা আধুনিক প্রযুক্তির চোখ এড়িয়ে গেল। জামাইলের মুক্তি: সামরিক মন থেকে নৈতিক মুক্তি ডেটা স্থানান্তরের পর, অনির্বাণ জামাইলের কানে ফিসফিস করে বললেন, "আপনি একজন বিশ্বাসঘাতকের বংশধর নন, জামাইল। আপনি একজন নায়ক। এখন আপনার মুক্তি।" জামাইল চোখ বন্ধ করলেন। তার সামরিক মনের সমস্ত শৃঙ্খলা ভেঙে গেল, কিন্তু তার নৈতিক আত্মবিশ্বাস ফিরে এল। তিনি বুঝতে পারলেন, রণজিতের কাছে কাজ করার সময় তিনি যে ভুলগুলো করেছিলেন, এই আত্মত্যাগের মাধ্যমে তার মুক্তি ঘটল। অনির্বাণ ও ইরা নিরাপদে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলেন। তাদের হাতে এখন সিন্ডিকেটের Protocol Delta-কে ঠেকানোর ব্যাক-আপ কী এবং জামাইলের আভ্যন্তরীণ সামরিক কৌশলগত ডেটা। এই অভিজ্ঞতার পর অনির্বাণ বুঝলেন, রক্ত নয়, মানুষের সিদ্ধান্তই তার ইতিহাস লেখে। আল-কুতুবের সতর্কবার্তা ছিল বিশ্বাসঘাতকতার আদর্শ সম্পর্কে, রক্তের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নয়।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion