ছায়ার শহরের প্রবেশ
আভা অরুণের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে তাকে পথ দেখাচ্ছিল। তার সোনালী আলোয় করিডোরের অন্ধকার কিছুটা দূর হচ্ছিল, কিন্তু চারপাশে ছায়ামূর্তিগুলোর ফিসফিসানি আর লাল চোখের ঝলকানি এক অদ্ভুত ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছিল। অরুণের মনে হচ্ছিল যেন অদৃশ্য চোখ তাকে প্রতিটি মুহূর্তে অনুসরণ করছে, তার প্রতিটি পদক্ষেপ যেন নীরবতার মধ্যে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। অরুণ দেখল, এই করিডোরটি যেন অসংখ্য শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত, প্রতিটি শাখা একটি ভিন্ন জগতের দিকে চলে গেছে, যেখানে প্রতিটি গল্পের জগৎ একে অপরের সাথে মিশে আছে, যেন এক বিশাল, জটিল মাকড়সার জাল, যা অনন্তকাল ধরে বিস্তৃত। প্রতিটি মোড়ে নতুন নতুন ছায়ামূর্তি তাদের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করছিল, যেন তারা অরুণের দুর্বলতা খুঁজছে, তাকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। করিডোরের দেয়ালগুলো ছিল ঠান্ডা আর স্যাঁতসেঁতে, তার উপর অদ্ভুত, অশুভ চিত্র খোদাই করা ছিল, যা দেখে মনে হচ্ছিল কোনো প্রাচীন অভিশাপের চিহ্ন।
“আমরা কোথায় যাচ্ছি?” অরুণ আভা-কে প্রশ্ন করল, তার কণ্ঠস্বরে কিছুটা উদ্বেগ, যেন সে এক অজানা গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যার শেষ কোথায় তা সে জানত না।
“ছায়ার শহরে,” আভা বলল, তার কণ্ঠস্বরে একরকম দৃঢ়তা, যেন সে এই পথ বহুবার দেখেছে। “ওরাই আমাদের স্মৃতি চুরি করছে, আমাদের জগৎকে গ্রাস করছে। ওদের মূল আস্তানা এই বইয়ের জগতের গভীরে, যেখানে সমস্ত ভুলে যাওয়া গল্প আর চরিত্রদের অস্তিত্বের টুকরোগুলো জমা হয়। ওরাই এই জগতের ক্যান্সার, যা ধীরে ধীরে সবকিছুকে গ্রাস করছে, এবং নিজেদের অন্ধকার সাম্রাজ্য বিস্তার করছে।”
অরুণ অবাক হয়ে বলল, “ছায়ার শহর? কিন্তু তোমরা তো বলেছিলে ওরা শুধু ছায়া।”
“ওরা ছায়া বটে, কিন্তু ওদেরও একটা জগৎ আছে,” আভা ব্যাখ্যা করল। “যখন কোনো গল্প ভুলে যায়, যখন কোনো চরিত্র মুছে যায়, তখন তাদের অস্তিত্বের টুকরোগুলো ছায়াদের জগতে চলে যায়। সেই টুকরোগুলোকে ওরা শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে। ওরা নিজেদেরকে ‘স্মৃতিভোজী’ বলে। ওরা যত বেশি স্মৃতি খায়, তত বেশি শক্তিশালী হয়। ওরা চায় সমস্ত গল্পকে গ্রাস করে নিজেদেরকে একমাত্র অস্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে, এই জগৎকে নিজেদের দখলে নিতে এবং নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে।” আভার কণ্ঠস্বরে একরকম চাপা ভয় ছিল, যেন সে ছায়াদের আসল ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন ছিল। তার ডানাগুলো মৃদু কাঁপছিল, যেন সেও এই যাত্রার পরিণতি নিয়ে চিন্তিত।
তারা একটি বিশাল, অন্ধকার গেটের সামনে এসে দাঁড়াল। গেটটি পুরোনো, কালো পাথরের তৈরি, আর তার গায়ে অদ্ভুত, অশুভ প্রতীক খodাই করা, যা দেখে মনে হচ্ছিল কোনো প্রাচীন অভিশাপের চিহ্ন। গেটের দু’পাশে দুটি বিশাল, কালো স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে, যা থেকে একরকম ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে আসছে, যেন নরকের দ্বার। গেটের উপর থেকে একরকম বিকট শব্দ ভেসে আসছিল, যা অরুণের মনে ভয় জাগাচ্ছিল, তার হৃদপিণ্ড দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছিল। গেটটি থেকে একরকম অশুভ শক্তি বিচ্ছুরিত হচ্ছিল, যা অরুণের শরীরকে অবশ করে দিচ্ছিল। গেটের কালো পাথরের উপর যেন অদৃশ্য হাত দিয়ে আঁকা ছিল হাজারো আত্মার মুখ, যারা যন্ত্রণায় চিৎকার করছিল।
“এটা ছায়ার শহরের প্রবেশপথ,” আভা বলল। “ভেতরে প্রবেশ করা কঠিন। ওরা ওদের শক্তি দিয়ে এই গেটকে রক্ষা করে। এই গেট ‘ভয়ের দ্বার’ নামে পরিচিত। যারা ভয় পায়, তারা এর ভেতর দিয়ে যেতে পারে না। এই গেটটি মানুষের দুর্বলতার উপর ভিত্তি করে তৈরি, এবং এটি তাদের ভয়কে আরও বাড়িয়ে তোলে.”
অরুণ গেটের দিকে তাকাল। তার মনে ভয় জাগল, কিন্তু সে জানত, তাকে এই পথেই যেতে হবে। সে তার পুরোনো লাইব্রেরিকে বাঁচাতে চায়, এই বইয়ের জগৎকে বাঁচাতে চায়। তার মনে পড়ল, তার লাইব্রেরির প্রতিটি বই তার দিকে তাকিয়ে আছে, তাদের আশা তার উপর, তাদের অস্তিত্ব তার হাতে। এই চিন্তা তাকে সাহস জোগাল।
“কীভাবে খুলব এটা?” অরুণ প্রশ্ন করল, তার চোখ গেটের অশুভ প্রতীকের উপর নিবদ্ধ, তার মনে একরকম অস্থিরতা।
“এটা খুলতে হলে তোমাকে তোমার হৃদয়ের সবচেয়ে শক্তিশালী স্মৃতি দিয়ে স্পর্শ করতে হবে,” আভা বলল। “এমন একটি স্মৃতি, যা তোমাকে শক্তি জোগাবে, যা তোমাকে ভয়কে জয় করতে সাহায্য করবে। তোমার সবচেয়ে মূল্যবান স্মৃতি, যা তোমাকে তোমার অস্তিত্বের গভীরতম অর্থ দেয়, এবং যা তোমার আত্মাকে আলোকিত করে।”
অরুণ চোখ বন্ধ করল। তার মনে ভেসে উঠল ‘জ্ঞানদীপ’ লাইব্রেরির পুরোনো দিনের স্মৃতি। যখন লাইব্রেরিটা লোকে লোকারণ্য থাকত, যখন শিশুরা গল্প শুনতে আসত, তাদের চোখে ছিল বিস্ময় আর আনন্দ, তাদের হাসির শব্দ লাইব্রেরির প্রতিটি কোণকে আলোকিত করত। যখন গবেষকরা গভীর মনোযোগে বই পড়ত, তাদের মুখে ছিল জ্ঞানের তৃষ্ণা, তাদের নীরবতা লাইব্রেরির পবিত্রতা রক্ষা করত। তার মনে পড়ল, কীভাবে সে তার জীবনের সেরা দিনগুলো এই বইগুলোর সাথে কাটিয়েছে, প্রতিটি বই তার কাছে যেন এক একটি সন্তান, এক একটি জীবনের অংশ। এই স্মৃতিগুলো তাকে শক্তি জোগাল, তার মনে এক অদ্ভুত উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ল, যা তার সমস্ত ভয়কে দূর করে দিল, এবং তার আত্মাকে শক্তিশালী করে তুলল।
সে তার হাত বাড়িয়ে গেটটি স্পর্শ করল। তার হাতের স্পর্শে গেটটি থেকে একটি উজ্জ্বল সাদা আলো বেরিয়ে এল, আর গেটের গায়ে খodাই করা অশুভ প্রতীকগুলো জ্বলজ্বল করে উঠল, তারপর ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল, যেন তারা আলোর স্পর্শে ভস্ম হয়ে গেল। গেটটি ধীরে ধীরে খুলে গেল, এক অদ্ভুত শব্দ করে, আর তার ভেতর থেকে এক ঠান্ডা, অন্ধকার বাতাস বেরিয়ে এল, যা অরুণের শরীরকে কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু অরুণের মনে কোনো ভয় ছিল না, শুধু দৃঢ় সংকল্প, যা তার আত্মাকে আলোকিত করছিল। গেটের ভেতর থেকে ভেসে এল এক দীর্ঘশ্বাস, যেন গেটটি তার বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে।
“চলো,” আভা বলল। “সময় নষ্ট করা যাবে না। ওরা হয়তো আমাদের উপস্থিতি টের পেয়েছে, এবং এখন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এই গেট খোলার শব্দ ওদের আকৃষ্ট করেছে।”
তারা ছায়ার শহরের ভেতরে প্রবেশ করল। শহরটা ছিল অদ্ভুত। এখানে কোনো বাড়িঘর ছিল না, শুধু অসংখ্য কালো স্তম্ভ আর ছায়ামূর্তি ঘুরে বেড়াচ্ছিল। শহরটা যেন এক চিরন্তন অন্ধকারে ডুবে আছে, যেখানে কোনো আলো নেই, কোনো রঙ নেই, শুধু ধূসরতা আর শূন্যতা, যা মানুষের আত্মাকে গ্রাস করতে চায়। ছায়ামূর্তিগুলো অরুণের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করছিল, তাদের চোখ থেকে লাল আলো বেরিয়ে আসছিল, যেন তারা অরুণের দুর্বলতা খুঁজছে, তাকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে, তার মনকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করতে চাইছে। বাতাসে এক তীব্র, পচা গন্ধ ভেসে আসছিল, যেন হাজারো পুরোনো স্মৃতি পচে গেছে।
“ওরা তোমাকে ভয় দেখাচ্ছে,” আভা বলল। “ওদের ভয় পেও না। তোমার স্মৃতি ওদের চেয়ে শক্তিশালী। ওদের দুর্বলতা হলো মানুষের বিশ্বাস আর ভালোবাসা, যা ওরা কখনো বুঝতে পারবে না, কারণ ওদের নিজেদের কোনো অনুভূতি নেই।”
অরুণ অনুভব করল, তার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে, যেন ছায়ামূর্তিগুলো তার শক্তি কেড়ে নিচ্ছে, তার আত্মাকে গ্রাস করতে চাইছে। তার মনে হলো যেন তার সমস্ত শক্তি শুষে নিচ্ছে, তার শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে তার মনকে দৃঢ় রাখল। সে তার লাইব্রেরির কথা ভাবল, তার প্রিয় বইগুলোর কথা ভাবল। সে তার মনে মনে তার প্রিয় গল্পগুলো আবৃত্তি করতে লাগল, যা তাকে সাহস জোগাচ্ছিল, তার আত্মাকে শক্তিশালী করে তুলছিল।
হঠাৎ করেই একটি বিশাল ছায়ামূর্তি তাদের সামনে এসে দাঁড়াল। এটি অন্য ছায়ামূর্তিগুলোর চেয়ে অনেক বড় এবং শক্তিশালী। তার চোখ থেকে তীব্র লাল আলো বেরিয়ে আসছে, আর তার শরীর থেকে একরকম ঠান্ডা শক্তি বিচ্ছুরিত হচ্ছে, যা অরুণের শ্বাসরোধ করে দিচ্ছিল, তার হৃদপিণ্ড যেন থেমে যাচ্ছিল। তার কণ্ঠস্বর ছিল বজ্রের মতো গভীর, যা পুরো ছায়ার শহরকে কাঁপিয়ে তুলছিল, এবং অরুণের মনে এক তীব্র আতঙ্ক জাগাচ্ছিল। ছায়ামূর্তিটির শরীর থেকে একরকম বিকট শব্দ বের হচ্ছিল, যেন হাজারো আত্মা একসাথে চিৎকার করছে। এই ছায়ামূর্তিটির নাম ছিল ‘স্মৃতিভোজী রাজা’, ছায়াদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন এবং শক্তিশালী। তার উপস্থিতি এতটাই ভয়ংকর ছিল যে, মনে হচ্ছিল যেন সময় নিজেই তার সামনে থেমে গেছে।
“একজন মানুষ এখানে প্রবেশ করেছে,” স্মৃতিভোজী রাজা গভীর, গর্জনশীল স্বরে বলল। “তুমি কী চাও, হে নশ্বর? তুমি আমাদের পবিত্র স্থানে কেন এসেছ? তুমি কি জানো তোমার পরিণতি কী হবে? তুমি কি জানো, এই স্থানে যারা আসে, তারা আর কখনো ফিরে যায় না? তাদের স্মৃতি আমাদের চিরন্তন ভোজ্য হয়।”
“আমি চাই তোমরা এই বইয়ের জগৎ ছেড়ে দাও,” অরুণ বলল। “তোমরা আমাদের স্মৃতি চুরি করছ, আমাদের অস্তিত্ব মুছে দিচ্ছ। তোমরা এই জগতের জন্য অভিশাপ, এক অন্ধকার শক্তি, যা সবকিছুকে ধ্বংস করে।”
স্মৃতিভোজী রাজা হাসল। তার হাসিটা ছিল বিকট, যেন হাজারো আত্মার আর্তনাদ, যা অরুণের কানে বাজছিল, তার মনে এক তীব্র ভয় জাগাচ্ছিল। “স্মৃতি? অস্তিত্ব? ওগুলো তো ক্ষণস্থায়ী। আমরা চিরন্তন। আমরা এই জগৎকে গ্রাস করব, আর তোমরা সবাই আমাদের অংশ হয়ে যাবে। তোমাদের গল্পগুলো আমাদের শক্তি হবে, তোমাদের স্মৃতিগুলো আমাদের খাদ্য। তোমরা আমাদের কাছে কিছুই নও, শুধু আমাদের খেলার পুতুল।”
অরুণ বুঝতে পারল, এই ছায়ামূর্তিই ছায়াদের নেতা। তাকে এই নেতাকে হারাতে হবে। কিন্তু কীভাবে? তার কাছে তো কোনো জাদু নেই, কোনো বিশেষ ক্ষমতা নেই। সে শুধু একজন সাধারণ মানুষ, যার একমাত্র অস্ত্র তার জ্ঞান আর বিশ্বাস।
“তোমার কাছে হয়তো জাদু নেই,” আভা অরুণের কানে ফিসফিস করে বলল। “কিন্তু তোমার কাছে আছে গল্প। গল্পই আমাদের শক্তি। মানুষের বিশ্বাসই আমাদের অস্ত্র। তোমার হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা প্রতিটি গল্পই তোমার শক্তি, যা সমস্ত অন্ধকারকে দূর করতে পারে।”
অরুণ ছায়াদের নেতার দিকে তাকাল। তার মনে পড়ল, সে এই লাইব্রেরিতে কত গল্প পড়েছে, কত চরিত্রকে সে নিজের মনে বাঁচিয়ে রেখেছে। সে বুঝতে পারল, তার শক্তি তার জ্ঞান, তার স্মৃতি, তার বিশ্বাস, তার ভালোবাসা।
“তোমরা হয়তো স্মৃতি চুরি করতে পারো,” অরুণ বলল। “কিন্তু তোমরা গল্পকে মারতে পারবে না। গল্পরা মানুষের মনে বেঁচে থাকে, তারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। তোমরা শুধু নকল অস্তিত্ব, একটি শূন্যতা, যা আলোর স্পর্শে বিলীন হয়ে যায়।”
স্মৃতিভোজী রাজা অরুণের কথা শুনে গর্জন করে উঠল। সে তার কালো হাত অরুণের দিকে বাড়িয়ে দিল, যেন তাকে গ্রাস করতে চাইছে, তার সমস্ত শক্তি শুষে নিতে চাইছে। অরুণের মনে হলো যেন তার সমস্ত শক্তি শুষে নিচ্ছে, তার শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। অরুণ পিছিয়ে গেল, কিন্তু তার মনে ভয় ছিল না। সে জানত, তাকে লড়াই করতে হবে।
আভা অরুণের চারপাশে ঘুরতে লাগল, আর তার ডানা থেকে আরও সোনালী গুঁড়ো ঝরে পড়ল। এই গুঁড়ো ছায়াদের নেতার গায়ে পড়তেই সে যেন কিছুটা দুর্বল হয়ে গেল, তার কালো শরীর থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে আসতে লাগল, যেন সে আগুনে পুড়ছে। অরুণ বুঝতে পারল, আভা তাকে সাহায্য করছে, তার শক্তি বৃদ্ধি করছে।
“তোমার গল্প বলো,” আভা অরুণের কানে ফিসফিস করে বলল। “তোমার প্রিয় গল্পগুলো বলো। ওগুলো ওদের দুর্বল করে দেবে। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য ওদের জন্য বিষ, প্রতিটি স্মৃতি ওদের জন্য মৃত্যু। তোমার বিশ্বাসই তোমার অস্ত্র।”
অরুণ চোখ বন্ধ করল। তার মনে ভেসে উঠল তার প্রিয় গল্পগুলো, তার প্রিয় চরিত্রগুলো। সে মনে মনে তাদের নাম নিতে লাগল, তাদের গল্প বলতে লাগল। তার মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছিল না, কিন্তু তার মন থেকে যেন হাজারো গল্পের শক্তি বেরিয়ে এসে ছায়াদের নেতার দিকে ধেয়ে গেল, যা অদৃশ্য আলোর তীরের মতো আঘাত হানছিল, তার অস্তিত্বকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল।
স্মৃতিভোজী রাজা যন্ত্রণায় গর্জন করে উঠল। তার শরীর থেকে কালো ধোঁয়া আরও তীব্রভাবে বেরিয়ে আসতে লাগল, আর তার লাল চোখগুলো নিস্তেজ হয়ে এল। অরুণ বুঝতে পারল, তার কৌশল কাজ করছে। গল্পই ছায়াদের দুর্বলতা। কিন্তু এই যুদ্ধ সবে শুরু, এবং এর শেষ কোথায় তা সে জানত না, তার সামনে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছিল।
হঠাৎ, স্মৃতিভোজী রাজার পাশ থেকে আরেকটি ছায়ামূর্তি বেরিয়ে এল। এটি ছিল প্রফেসর মিত্রের ছায়া। তার চোখ দুটি জ্বলজ্বল করছিল এক ঠান্ডা, হিসাবী লাল আলোয়। সে স্মৃতিভোজী রাজার দিকে তাকিয়ে এক মৃদু, শয়তানি হাসি হাসল, যেন সে এই পরিস্থিতির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখছে। অরুণ অবাক হয়ে দেখল, প্রফেসর মিত্রের ছায়া স্মৃতিভোজী রাজার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল, এবং তার শরীর থেকে একরকম কালো শক্তি স্মৃতিভোজী রাজার দিকে প্রবাহিত হতে লাগল, যা তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলছিল।
(চলবে)
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion