তারা প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে সংকেত পাঠিয়ে যাচ্ছিল। সূর্য ধীরে ধীরে দিগন্তের নিচে নেমে যাচ্ছে। আলো কমে আসছে। তাদের আশাও নিভে আসছিল।
ঠিক যখন তারা প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছে, তখন রিয়া চেঁচিয়ে উঠল। "ওই যে! ওইটা কী?"
সে আঙুল দিয়ে দূরে সমুদ্রের একটা নির্দিষ্ট বিন্দুর দিকে দেখাল। অরিন্দম আর সোহম সেদিকে তাকিয়ে প্রথমে কিছু দেখতে পেল না। কিন্তু কিছুক্ষণ পর, তারাও লক্ষ্য করল।
দিগন্তের কাছাকাছি একটা ছোট্ট কালো বিন্দু। বিন্দুটা স্থির নয়, ধীরে ধীরে নড়াচড়া করছে।
"জাহাজ? নাকি কোনো মাছ ধরার ট্রলার?" সোহমের গলায় উত্তেজনার সাথে অবিশ্বাস মেশানো।
অরিন্দম তার পকেট থেকে ভাঙা দূরবীণটা বের করলেন। অনেক কষ্টে ফোকাস করার পর তিনি দেখতে পেলেন। "ওটা একটা পেট্রোল বোট। কোস্ট গার্ডের হতে পারে।"
এই খবরটা শুনে তাদের মধ্যে যেন নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হলো। সোহম দ্বিগুণ উৎসাহে রিফ্লেক্টরটা ঘোরাতে লাগল। তারা তিনজনই তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে হাত নাড়তে শুরু করল, যদিও তারা জানত এত দূর থেকে তাদের দেখা প্রায় অসম্ভব।
বোটটা ধীরে ধীরে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছিল বলে মনে হচ্ছিল। হয়তো এটা তাদের রুটিন টহল। কিন্তু তারা কি এই ছোট, অজানা দ্বীপটার দিকে মনোযোগ দেবে?
প্রতিটা মুহূর্ত তাদের কাছে ছিল এক একটা যুগ। বোটটা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল। এখন খালি চোখেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
"ওরা আমাদের দেখতে পেয়েছে! ওরা এদিকেই আসছে!" রিয়া আনন্দে চিৎকার করে উঠল।
সত্যিই তাই। বোটটা তার গতিপথ পরিবর্তন করে সরাসরি দ্বীপের দিকে এগিয়ে আসছিল। তাদের প্রতিফলিত আলোর সংকেত সফল হয়েছে।
তারা তিনজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরল। তাদের চোখে জল। হাসি-কান্না মেশানো এক অদ্ভুত অনুভূতি। এতক্ষণ ধরে চেপে রাখা সমস্ত ভয়, যন্ত্রণা, দুঃখ যেন বাঁধভাঙা জলের মতো বেরিয়ে আসছিল। তারা বেঁচে গেছে। অবশেষে এই নরক থেকে তাদের মুক্তি হতে চলেছে।
কিন্তু তাদের আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।
নিচে, পাহাড়ের গোড়া থেকে হঠাৎ করেই সেই ভয়ঙ্কর খট্ খট্ শব্দটা শুরু হলো। একটা নয়, দুটো নয়, অসংখ্য। মনে হচ্ছিল দ্বীপের সমস্ত প্রাণী পাহাড়ের নিচে এসে জড়ো হয়েছে।
বোটের ইঞ্জিনের শব্দ, যা তাদের কাছে ছিল জীবনের সঙ্গীত, সেই শব্দই দ্বীপের শয়তানদের জাগিয়ে তুলেছে।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion