নিথর পদচিহ্ন (Frozen Footprints)
পর্ব ৮: পরিচিত মুখ
ফার্মহাউসের টেবিলে পড়ে থাকা সেই কার্ডটা রিমার হাতে কাঁপছিল। “আপনার জন্য অপেক্ষা করছে… তৃষা, আপনার একান্ত পরিচিত এক মুখ, যে আপনার জীবনেরই এক অংশ।” এই কথাগুলো যেন ঠান্ডা করাতের মতো তার স্নায়ুগুলোকে কেটে দিচ্ছিল, প্রতিটি শব্দ যেন তার আত্মাকে বিদ্ধ করছিল, এক হিমশীতল আতঙ্ক তার রক্তে মিশে যাচ্ছিল, তাকে ভেতর থেকে জমাট করে দিচ্ছিল। তৃষা। কে এই তৃষা? তার মনের ভেতর শত শত মুখ ভেসে উঠছিল – বন্ধু, আত্মীয়, প্রাক্তন সহকর্মী, পরিচিতজন – কিন্তু কোন মুখটা এই বিভীষিকার শিকার, তা সে বুঝতে পারছিল না, আর এই অনিশ্চয়তা তাকে পাগল করে দিচ্ছিল, তার মস্তিষ্ক যেন নিজস্ব ফাঁদে আটকা পড়ছিল। নীল রায় কেবল শিকারদের জীবনই নেয়নি, সে যেন রিমার জীবনের প্রতিটি কোণ, প্রতিটি ব্যক্তিগত সম্পর্ককেও ক্ষতবিক্ষত করতে চাইছে, তার অস্তিত্বের প্রতিটি সুতো ছিঁড়ে ফেলতে চাইছে, তাকে এক জীবন্ত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে চাইছে। এই হুমকি ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, যা রিমার ভেতরের সবচেয়ে গভীর ভয়কে জাগিয়ে তুলছিল, তাকে নিজেরই ব্যক্তিগত গহ্বরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, যেখানে কেবল অন্ধকারই রাজত্ব করে। সে অনুভব করছিল, সে এক অসহায় শিকার, যার প্রতিটি দুর্বলতা খুনীর হাতের মুঠোয়, আর নীল রায় তার প্রতিটি ব্যক্তিগত দুর্বলতা সম্পর্কে অবগত, যেন সে রিমার মনের প্রতিটি অন্ধকার কোণকেও চিনে নিয়েছে, তার আত্মার গোপনতম স্থানগুলোতেও তার প্রবেশাধিকার।“অভ্রজিৎ, দ্রুত! তৃষা নামে আমার পরিচিত কাউকে খুঁজে বের করো। যেকোনো তৃষা! সময় নেই, অভ্রজিৎ, একদম নেই! প্রতিটি শ্বাসই যেন এক অমূল্য সম্পদ, যা দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে!” রিমার কণ্ঠে ছিল এক ধরণের অসহায় আর্তনাদ, যা অভ্রজিৎ আগে কখনো শোনেনি, তার ম্যাডামের এই আর্তনাদ অভ্রজিতের মেরুদণ্ড দিয়ে শীতল ঢেউ বইয়ে দিল, তার নিজেরও শ্বাস আটকে গেল। তার চোখে স্পষ্ট আতঙ্ক। “আর সেই সাথে নীল রায়ের সমস্ত পরিচিতি, বন্ধু-বান্ধব, সামাজিক বৃত্ত, সব কিছু খুঁটিয়ে দেখবে। কে এই তৃষা? সে কি এখনও জীবিত আছে? নাকি ইতিমধ্যেই সে…” অভ্রজিৎ সঙ্গে সঙ্গে তার টিম নিয়ে নেমে পড়ল। সময় খুব কম, প্রতিটি সেকেন্ড যেন এক মৃত্যুঘণ্টার মতো বাজছিল, আর সেই ঘণ্টাধ্বনি তাদের প্রতিটি স্নায়ুকে কাঁপিয়ে দিচ্ছিল, তাদের মস্তিষ্কের প্রতিটি কোণায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছিল।অভ্রজিৎ তার টিম নিয়ে পাগলের মতো খোঁজ শুরু করল। রিমার ব্যক্তিগত ফোন রেকর্ড, সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল, তার পরিবারের সদস্যদের তালিকা, এমনকি তার পুরনো কলেজের বন্ধু-বান্ধবদের খোঁজ করা হলো, প্রতিটি নাম, প্রতিটি ছবি তাদের সামনে এক নতুন প্রশ্ন নিয়ে আসছিল, এক অদেখা, ভয়ংকর চাবুকের মতো তাদের তাড়া করছিল। নীল রায়ের পরিচিতি, তার সামাজিক বৃত্ত, তার পুরনো স্কুল-কলেজের বন্ধুদের তালিকাও বিশ্লেষণ করা হচ্ছিল, যেন তারা এক অদৃশ্য ধাঁধার টুকরোগুলো একত্রিত করার চেষ্টা করছিল, যা কখনোই সম্পূর্ণ হবে না, কেবল আরও বিভেদ তৈরি করবে। প্রতিটা পরিচিত নাম, প্রতিটা অচেনা মুখ তাদের সামনে এক নতুন ধাঁধা নিয়ে আসছিল। শহরের প্রতিটি প্রান্তে তৃষা নামের কাউকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হলো, কিন্তু অসংখ্য তৃষার ভিড়ে সঠিক মুখটি খুঁজে বের করা ছিল প্রায় অসম্ভব, এক অন্তহীন মরুভূমিতে এক ফোঁটা জলের সন্ধানের মতো, যেখানে কেবল মরিচিকা দেখা যাচ্ছিল।সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছিল, রিমার অস্থিরতা তত বাড়ছিল। তার মাথার ভেতর যেন হাজার হাজার মৌমাছি ভন ভন করছিল, এক অবিরাম গুঞ্জন তার মস্তিষ্কের ভেতরে চলতে থাকল, যা তাকে এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি দিচ্ছিল না। সে নিজেও তার পরিচিতদের ফোন করতে শুরু করল, কিন্তু প্রতিটি ফোন রিং হওয়ার সময় তার বুকটা কেঁপে উঠছিল, এই ভয়ে যে, হয়তো অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া আসবে না, অথবা কোনো ভয়ংকর খবর আসবে, অথবা খুনীর ঠান্ডা, বিদ্রূপাত্মক কণ্ঠস্বর ভেসে আসবে, যা তার আত্মার গভীরে আঘাত হানবে। তার মনে হচ্ছিল, খুনী তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছে, আর তৃষার জীবন এখন তার হাতে, এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা, যা যেকোনো মুহূর্তে ছিঁড়ে যেতে পারে, আর সে সুতো ছিঁড়তে খুনীর এক মুহূর্তও লাগবে না।অনেক চেষ্টার পর, সাইবার ক্রাইম টিম একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে এল। নীল রায়ের পুরনো কলেজ বন্ধুদের একজন, যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, তার নামটিও ড. অনিকেত রায়ের রোগীর তালিকায় ছিল। তার সাথে যোগাযোগ করে জানা গেল, নীল রায় একসময় রিমারই এক পুরনো মেন্টর, তৃষা চক্রবর্তীকে বেশ কয়েকবার stalk করেছিল। তৃষা চক্রবর্তী। রিমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল, যেন বজ্রপাত হলো তার মস্তিষ্কের গভীরে, তার সমস্ত চেতনাকে গ্রাস করে নিল। তৃষা ছিল তার প্রথম সিনিয়র অফিসার যখন সে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। তৃষা তাকে হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছিল, ছিল তার এক ধরণের দিদির মতো। তাদের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক ছিল, যে সম্পর্ক রিমার সবচেয়ে ব্যক্তিগত এবং সুরক্ষিত ছিল, এক অভেদ্য দুর্গ। কিন্তু কয়েক বছর আগে তৃষা কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে পুলিশ বাহিনী থেকে অবসর নিয়েছিলেন এবং অনেকটা নির্জন জীবনযাপন করছিলেন, নিজের জগতে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন, যা এখন তার জন্য এক মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এক নীরব সমাধি।তৃষা নীল রায়ের stalker-এর শিকার হয়েছিল? এই তথ্য রিমার মনে এক নতুন আতঙ্ক নিয়ে এল। খুনী শুধু রিমার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানত না, সে জানত তার সবচেয়ে দুর্বলতম সম্পর্কগুলো সম্পর্কেও, তার হৃদয়ের প্রতিটি গোপন কক্ষের খবর সে জানত, প্রতিটি দুর্বলতা সে উন্মোচন করতে চাইছিল। নীল রায় কি তৃষাকে টার্গেট করেছিল কারণ সে রিমার খুব কাছের মানুষ? রিমার ব্যক্তিগত জীবনে আঘাত হানার জন্যই কি এই কৌশল, তাকে ভেতর থেকে ভেঙে দেওয়ার এক নিষ্ঠুর পরিকল্পনা? নাকি তৃষারও অতীত ছিল নীল রায়ের সাথে, যা রিমার অজানা, এক অন্ধকার অতীত যা এখন নতুন করে জেগে উঠেছে, যেন এক মৃত আত্মা কবর থেকে উঠে এসেছে? এই প্রশ্নের উত্তর রিমার মনকে অস্থির করে তুলল। তৃষার নির্জন জীবনযাপনই কি তাকে নীল রায়ের সহজ শিকারে পরিণত করেছে, তাকে একাকীত্বের ফাঁদে আটকে দিয়েছে, যেখানে কোনো সাহায্যের হাত পৌঁছাতে পারে না?তৃষার পরিচয় জানার পর রিমার টিম দ্রুত তৃষার বর্তমান ঠিকানা খুঁজে বের করল। শহর থেকে খানিকটা দূরে একটি পুরোনো, নির্জন ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটটি বাইরে থেকে তালা দেওয়া ছিল, কিন্তু ভেতরে আলো জ্বলছিল, যা এক অশুভ ইঙ্গিত দিচ্ছিল, যেন ভেতরে কোনো অশুভ উৎসব চলছে, মৃত্যুর নৃত্য পরিবেশিত হচ্ছে। রিমার মনে হলো, এইবার তারা খুনীকে ধরতে পারবে, এইবার হয়তো তারা এই বিভীষিকাময় খেলার শেষ দেখতে পাবে, অথবা নিজেরাই এই খেলার শিকার হবে। কিন্তু ততক্ষণে নীল রায়ের কাছ থেকে আরেকটি ফোন কল এল, এবার সরাসরি রিমার সরকারি নম্বরে, সেই অভিশপ্ত ফোন, যা রিমার আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে দিল, তার স্নায়ুগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে দিল।“ইন্সপেক্টর সেনগুপ্ত, আপনি আমার শিল্পকর্মের প্রতিটি ধাপ বুঝতে পারছেন, তাই না?” খুনীর কণ্ঠস্বর ছিল ঠান্ডা, শান্ত, কিন্তু তার প্রতিটি শব্দে এক ধরণের আনন্দ আর বিদ্রূপ মিশে ছিল, যেন সে তার শিকারের যন্ত্রণায় হাসছে, প্রতিটি আর্তনাদ তার কানে সুর হয়ে বাজছে। “আপনি তৃষাকে খুঁজে পেয়েছেন। খুব ভালো। কিন্তু সময় খুব কম। আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, আমার শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম, যা তৃষার জীবন দিয়ে তৈরি। আপনার ব্যর্থতা দিয়ে আমি আমার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে পূর্ণতা দেব, এক অমর সৃষ্টি যা আপনার চিরকালের জন্য বেদনা হয়ে থাকবে। আপনি যদি আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে খুঁজে বের করতে না পারেন, তাহলে আপনার এই ব্যর্থতা আপনার জীবনে এক অমলিন কলঙ্ক হিসেবে থাকবে। এবং তৃষার জীবনও আমার শিল্পকর্মের অংশ হয়ে যাবে, এক নিথর, বিকৃত সৌন্দর্যের নিদর্শন, যা আপনার মনে এক ভয়ংকর স্মৃতিচিহ্ন হয়ে থাকবে।”কথাটা শেষ হওয়ার আগেই ফোন কেটে গেল। রিমার মনে হলো, তার হৃদপিণ্ডটা যেন বুকের ভেতর লাফিয়ে উঠল, প্রায় তার পাঁজর ভেঙে বেরিয়ে আসার উপক্রম, তার ফুসফুস যেন বাতাসহীন হয়ে পড়েছিল। এক ঘণ্টা! এই এক ঘণ্টা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ এক ঘণ্টা, যা প্রতিটি সেকেন্ডে এক অনন্তকাল মনে হচ্ছিল, প্রতিটি টিক-টিক শব্দ যেন তার কফিনে পেরেক ঠুকছিল, তাকে জীবন্ত কবর দিচ্ছিল। নীল রায় তাদের সাথে এক ভয়ংকর খেলা খেলছিল, যেখানে সময়টাই ছিল সবচেয়ে বড় অস্ত্র, আর সেই অস্ত্র দিয়ে সে রিমার আত্মাকে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছিল, তাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছিল।রিমা আর অভ্রজিৎ দ্রুত তৃষার ফ্ল্যাটের দিকে রওনা হলো। সাথে পর্যাপ্ত ফোর্স। রিমার মনে তখন কোনো ভয় ছিল না, ছিল কেবল এক অদম্য জেদ, এক ভয়ংকর সংকল্প, যা তাকে অন্ধ করে দিচ্ছিল, তাকে এক অপ্রতিরোধ্য দানবে পরিণত করছিল। সে জানত, এইবার হয় মারবে, না হয় মরবে। এটা কেবল তৃষার জীবন বাঁচানোর লড়াই নয়, এটা তার নিজের অস্তিত্বের লড়াই, তার পেশার সম্মান বাঁচানোর লড়াই, এবং নীল রায়ের বিকৃত উন্মাদনাকে থামানোর শেষ সুযোগ, তার নিজেরই মুক্তি পাওয়ার শেষ চেষ্টা, তার আত্মাকে বাঁচানোর শেষ যুদ্ধ। রিমার চোখে রক্ত জমে গিয়েছিল, তার শরীর কাঁপছিল, কিন্তু তার মনে এক ধরণের দৃঢ়তা জন্ম নিয়েছিল, যা তাকে এক দানবীয় শক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছিল, তাকে মানুষের সীমানা অতিক্রম করতে বাধ্য করছিল।ফ্ল্যাটের বাইরে এসে তারা থমকে দাঁড়াল। ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে শক্তভাবে তালা দেওয়া। ভেতর থেকে কোনো শব্দ নেই, এক অশুভ নিস্তব্ধতা যেন সবকিছু গ্রাস করে রেখেছিল, এক মৃত্যুপুরীর নীরবতা। রিমা অনুভব করল, খুনী তাদের জন্য ভেতরে একটি ফাঁদ পেতে রেখেছে, যেখানে তারা নিজেদেরই জীবন হারাতে পারে, অথবা এমন কিছু দেখবে যা তাদের সারা জীবনের জন্য তাড়া করবে, তাদের মস্তিষ্ককে বিকৃত করে দেবে। ফ্ল্যাটের বাইরে অপেক্ষা করা ছিল এক অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে একমাত্র শত্রু ছিল অদৃশ্য, যার মুখ তারা দেখেনি, কিন্তু তার উপস্থিতি অনুভব করছিল প্রতিটি শিরায়।দরজা ভেঙে তারা ভেতরে প্রবেশ করল। ফ্ল্যাটের ভেতরে এক ঠান্ডা নিস্তব্ধতা, যা তাদের শ্বাসরোধ করে দিচ্ছিল, যেন বাতাসের প্রতিটি কণা বিষাক্ত, প্রতিটি নিঃশ্বাসই মরণফাঁদ। প্রতিটি জিনিসপত্র এলোমেলো, ভাঙা, যেন একটি ধ্বংসযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে, এক পিশাচের উন্মাদ নৃত্য এখানে পরিবেশিত হয়েছে। আর ফ্ল্যাটের মাঝখানে একটি কাঁচের টেবিলের উপর রাখা ছিল একটি ছোট, হাতে লেখা চিরকুট। চিরকুটে লেখা: “ইন্সপেক্টর, আপনি আবারও দেরিতে এসেছেন। আপনার ব্যর্থতা আমার শিল্পকর্মকে আরও পূর্ণতা দিয়েছে। তৃষা এখন আমার সেরা শিল্পকর্মের অংশ। তার প্রতিটি রক্তবিন্দু দিয়ে আমি আমার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে পূর্ণতা দিয়েছি, যা আপনার চিরকালের জন্য এক বিভীষিকাময় স্মৃতিচিহ্ন হয়ে থাকবে। এই খেলা শেষ হয়নি। দেখা হবে…”রিমার শ্বাস আটকে গেল। তৃষা নেই। তার মনটা শূন্য হয়ে গেল, যেন তার আত্মার একটি অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, এক গভীর গহ্বরে তলিয়ে গেছে। সে ব্যর্থ হয়েছে। নীল রায় আবারও তার নাকের ডগা দিয়ে পালিয়ে গেছে, এবং তৃষার জীবন তার বিকৃত শিল্পের অংশ হয়ে গেছে, এক বীভৎস, নিথর স্মারক হিসেবে চিরকালের জন্য, যা রিমার আত্মাকে পুড়িয়ে মারবে। রিমার মনে হলো, সে যেন একটি ভাঙা মানুষ, যার সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে, কেবল তার খালি চোখে এক অন্তহীন শুন্যতা, এক অসীম অন্ধকার। তার চোখে জল ভরে এল, কিন্তু এই জল ছিল ব্যর্থতার, ক্রোধের এবং এক গভীর দুঃখের, এক অসীম যন্ত্রণার অশ্রু, যা তার গাল বেয়ে নামছিল যেন অ্যাসিড। নীল রায় তাদের সাথে এক ভয়ংকর খেলা খেলছিল, আর এই খেলা তাকে ক্রমশ গ্রাস করে তুলছিল, তার অস্তিত্বকে বিলীন করে দিচ্ছিল, তাকে নিজেরই ভেতরে এক পিশাচের জন্ম দিতে বাধ্য করছিল। রিমার মনে হলো, নীল রায় যেন তার নিজেরই আয়নার প্রতিচ্ছবি, এক অন্ধকার অংশ যা তাকে ক্রমাগত তাড়া করে বেড়াচ্ছে, তাকে নিজেরই ভেতরে এক পিশাচের জন্ম দিতে বাধ্য করছে, তাকে নিজেরই আত্মার গভীরে অন্ধকার দেখতে বাধ্য করছে। এই খেলা শেষ হয়নি, বরং আরও ভয়ংকর মোড় নিয়েছে, এক এমন অন্ধকার পথে, যেখানে কেবল মৃত্যু এবং উন্মাদনাই অপেক্ষা করছে, আর রিমার পতন অত্যাসন্ন।
চলবে….
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion