কয়েকদিন কেটে যায়। সুব্রত নিয়মিত রণেনবাবুর অফিসে যায়, তার গতিবিধির ওপর নজর রাখে। কিন্তু কিছুই পাওয়া যায় না। রণেনবাবু রোজ আসেন, কাজ করেন, আর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যান। তার মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। সুব্রত হতাশ হয়ে পড়ে। তার মনে হয়, সে যেন একটা ভুল পথে হাঁটছে। তার সব চেষ্টা যেন ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। সে কি তবে ভুল লোকের পেছনে ছুটছে?
একদিন রাতে সুব্রত রণেনবাবুর বাড়ির কাছে যায়। বাড়িটা বেশ বড়, চারদিকে সুন্দর বাগান। বাগানটা রাতে আরো রহস্যময় লাগে, যেন রূপকথার কোনো প্রাসাদ। গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে সে ভাবে, ভেতরে ঢোকার কোনো উপায় আছে কি? তার মনে একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করে। সে জানে, এটা একটা বিপজ্জনক কাজ। কিন্তু সে তার লক্ষ্যের খুব কাছে।
হঠাৎ তার নজরে আসে বাড়ির পেছনের দিকের একটা জানালা খোলা। সুব্রতর হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। এটা কি তার জন্য একটা সুযোগ? তার মনে একটা আশা জাগে। হয়তো এটাই তার শেষ সুযোগ রণেনবাবুর আসল রূপ দেখার।
সুব্রত সাবধানে পেছনের দিকে যায়। জানালাটা দিয়ে ভেতরে ঢুকে সে দেখে, এটা একটা স্টাডি রুম। ঘরটা বই আর নথিপত্রে ভর্তি। ঘরটা দেখে মনে হয় এখানে অনেক গোপন কাজ হয়। সে বুঝতে পারে, রণেনবাবু এখানেই তার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করেন। ঘরটা যেন একটা গোলকধাঁধা, যেখানে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে।
সুব্রত ঘরটা ভালো করে দেখতে শুরু করে। প্রতিটি জিনিস যেন তার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাইছে। একটা পুরোনো ডেস্কের ড্রয়ার খুলতেই তার চোখ আটকে যায় একটা ফাইলের ওপর। ফাইলটার ওপর লেখা, “প্রজেক্ট ফিনিক্স“। এটাই কি সেই প্রোজেক্ট, যেটা নিয়ে মৃগেনবাবু কাজ করছিলেন? সুব্রতর মনে একটা আশা জাগে। হয়তো এই ফাইলের মধ্যেই লুকিয়ে আছে সব উত্তর।
সুব্রত ফাইলটা খুলে দেখে। ভেতরে প্রোজেক্টের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া আছে। সফটওয়্যারটা তৈরি হয়ে গেলে কোম্পানির কত লাভ হবে, তারও হিসাব দেওয়া আছে। কিন্তু ফাইলের শেষে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখতে পায় সে। একটা হাতে লেখা নোট, যাতে লেখা আছে, “কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে। কোনো ভুল হলে ফল ভালো হবে না।” নোটটা পড়ে সুব্রতর রক্ত হিম হয়ে যায়। এই কি তবে মৃগেনবাবুর জন্য হুমকি ছিল? তার মনে একটা ঝড় ওঠে। সে বুঝতে পারে, সে এতক্ষণ ধরে যে রহস্যের পেছনে ছুটছিল, তার উত্তর তার হাতের মুঠোয়।
নোটটা পড়ে সুব্রতর শরীর হিম হয়ে যায়। এটা কি রণেনবাবুর হাতের লেখা? আর কীসের ভুল? তবে কি মৃগেনবাবু কোনো ভুল করেছিলেন, যার জন্য তাকে প্রাণ দিতে হলো? সুব্রত নোটটা হাতে নিয়ে ভাবে, এর মধ্যে কি কোনো গোপন বার্তা লুকানো আছে? নোটটা যেন একটা ধাঁধা, যার সমাধান তার জানা নেই।
ঠিক তখনই ঘরের দরজা খোলার আওয়াজ হয়। সুব্রত তাড়াতাড়ি ফাইলটা বন্ধ করে ডেস্কের নিচে লুকিয়ে পড়ে। তার মনে হয়, কেউ যেন তার হৃদপিণ্ডটা চেপে ধরেছে। দরজার বাইরে পায়ের শব্দ শোনা যায়। কেউ একজন ঘরে ঢুকছে। সুব্রতর মনে একটাই চিন্তা, যদি রণেনবাবু তাকে দেখে ফেলেন, তাহলে কী হবে?
সুব্রত ভয়ে দম বন্ধ করে থাকে। যদি রণেনবাবু হন, আর তিনি যদি তাকে দেখে ফেলেন, তাহলে কী হবে? তার মনে হয়, আজ রাতে তার মৃত্যু নিশ্চিত। ঘরের প্রতিটি কোণ যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে, তার দুর্বলতার সুযোগ নেওয়ার জন্য। তার মনে হয়, সে যেন একটা শিকারী বেষ্টিত শিকার।
কিছুক্ষণ পরে পায়ের শব্দ চলে যায়। দরজাটা আবার বন্ধ হয়ে যায়। সুব্রত ধীরে ধীরে ডেস্কের নিচ থেকে বেরিয়ে আসে। তার সারা শরীর ঘামছে। সে জানে, আজ রাতে সে একটা বড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে গেছে। কিন্তু এই ঘটনার পরে, সে বুঝতে পারে যে সে কত বড় বিপদের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে। রণেনবাবু একজন সাধারণ ব্যবসায়ী নন, তিনি একজন ঠান্ডা মাথার খুনি।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion