বিমল জানালেন, 'প্রতিশব্দ' (Protishobdo) হলো এই জগতের একটি অদ্ভুত সত্তা। এটি সোমেশ্বরের সৃষ্টি হলেও এটি কেবল দ্বাররক্ষক নয়, এটি এই জগতের নিয়ন্তা (Regulator)।
"সোমেশ্বর যখন এই ছিদ্রটা তৈরি করেন, তখন বাস্তব এবং শব্দহীন জগতের মধ্যে একটা মাধ্যাকর্ষণমূলক গোলযোগ (Gravitational Anomaly) তৈরি হয়। এই গোলযোগের ফলে শব্দ-শোষণ শক্তি একটা স্থানে কেন্দ্রীভূত হয়, যা মৌন মিনার নামে পরিচিত। প্রতিশব্দের কাজ ছিল এই কেন্দ্রীভূত শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, যাতে এটি বাস্তবের দিকে ছড়িয়ে না পড়ে," বিমল বললেন।
"কিন্তু তাহলে সে আমাকে আক্রমণ করলো কেন? আর দরজা কেন বন্ধ করলো?" আনিক জিজ্ঞেস করলো।
"সে তোমাকে শিকার মনে করেনি," বিমল শান্তভাবে বললেন। "সে চেয়েছিল তোমাকে তার কাছ থেকে দূরে রাখতে, যাতে তুমি মৌন মিনারের কাছে না যাও। কারণ মিনারের কাছে গেলে শব্দ-শোষণ ক্ষমতা এতটাই বেড়ে যায় যে তোমার মতো বাস্তবের একজন মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠবে। আর একবার যদি মিনারটা ভেঙে যায়, তবে এই জগতের সব শক্তি একসাথে বাস্তবের দিকে ছুটবে।"
আনিকের হাতে থাকা ধ্বনিনির্গমন যন্ত্রটা দেখে বিমল বললেন, "তোমার যন্ত্রটা শুধু শব্দহীন-দের দুর্বল করতে পারবে, কিন্তু ছিদ্র বন্ধ করতে পারবে না। ছিদ্র বন্ধ করতে হলে তোমাকে মিনারের একেবারে শীর্ষে যেতে হবে এবং একটি বিশেষ ধরনের 'অনুরণন' (Resonance) তৈরি করতে হবে, যা দুই জগতের শক্তিকে সাময়িকভাবে নিরপেক্ষ করে দেবে। সেই অনুরণনের চাবি হলো— সোমেশ্বরের ডায়েরির শেষ নকশার সেই সূত্র, যা তিনি নিজেই বুঝতে পারেননি।"
বিমল তাকে মিনারের পথ দেখালেন। মিনারটি শহরের কেন্দ্রস্থলে, একটি বিশাল, ঘূর্ণায়মান কাঠামোর মতো দাঁড়িয়ে আছে। এটি গাঢ় বেগুনি আলো বিকিরণ করছিল। চারপাশে শত শত 'শব্দহীন' মূর্তির টহল ছিল।
বিমল আনিককে একটি পুরোনো লোহার রড দিলেন। "মিনারে যাওয়ার পথে এই জিনিসটা তোমাকে সাহায্য করবে। শব্দহীনরা আলোর চেয়েও বেশি সংবেদনশীল কম্পনের প্রতি। যখন তারা কাছাকাছি আসবে, তখন এই রডটা জোরে মাটিতে আঘাত কোরো।"
আনিক বিমলের কাছ থেকে বিদায় নিল। বৃদ্ধ প্রতিধ্বনি তার গুঞ্জন যন্ত্রের মৃদু শব্দে ক্যাফেটেরিয়ার অন্ধকার কোণে মিলিয়ে গেলেন।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion