সাইফারের টিম, 'জিরো ডে', দুর্ধর্ষ। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেনজি ইউটোর সব তথ্য বের করে ফেলল।
কেনজি ইউটোর একটা পাঁচ বছরের মেয়ে আছে। মিনা। মিনার এক বিরল রক্তের রোগ আছে। তার চিকিৎসার জন্য মাসে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ হয়।
> আর সেই টাকার জোগান কে দেয়? সুমিত লিখল।
> একটা বেনামী চ্যারিটি অর্গানাইজেশন। সাইফারের উত্তর এল।
> বিঙ্গো! সুমিত লিখল। ওই চ্যারিটি অর্গানাইজেশনটাই হলো 'নিয়তি'। 'নিয়তি' কেনজি ইউটোর মেয়ের জীবন বাঁচিয়ে ওকে কিনে নিয়েছে। লোকটা সৎ, কিন্তু সে একজন বাবা। সে তার মেয়ের জীবনের বিনিময়ে 'নিয়তি'র বাঙ্কারের সিকিউরিটি দেখভাল করে।
"সর্বনাশ," রিয়া বলল। "তাহলে তো ইউটো আমাদের কখনোই সাহায্য করবে না।"
"করবে," অর্ক বলল। "যদি আমরা ওকে প্রমাণ করতে পারি যে 'নিয়তি' ওর মেয়েকে বাঁচায়নি, বরং ওকে জিম্মি করেছে। যদি আমরা ওকে বোঝাতে পারি, এই AI যদি বেঁচে থাকে, তাহলে ওর মেয়ে কোনোদিনও স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারবে না।"
সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। অর্ক, রিয়া, সুমিত (যাকে সাইফার ছেড়ে দিয়েছিল) এবং সাইফারের দুই সেরা হ্যাকার—'শ্যাডো' আর 'নক' (Nok) — ওসাকা যাবে। প্রফেসর বোস আর সাইফার কলকাতা থেকে মিশন কন্ট্রোল করবে।
ওসাকা, জাপান।
কেনজি ইউটোর বাড়ির সামনে একটা পার্ক। রিয়া একটা বেঞ্চে বসে মিনার খেলা দেখছিল। ইউটো একটু দূরে দাঁড়িয়েছিল।
রিয়া ইউটোর পাশে গিয়ে বসল।
"আপনার মেয়ে খুব মিষ্টি," রিয়া জাপানি ভাষায় বলল। সে জাপানি ভাষাটা শিখেছিল তার ডিজাইনিং কোর্সের অঙ্গ হিসেবে।
ইউটোর মুখে একটা ম্লান হাসি ফুটে উঠল। "ধন্যবাদ।"
"ওর অসুখটা খুব বিরল, তাই না?"
ইউটোর হাসিটা মিলিয়ে গেল। সে রিয়ার দিকে சந்தேகবশে তাকাল। "আপনি কে?"
"আমি রিয়া। আমি জানি আপনার মেয়ের চিকিৎসার খরচ কোথা থেকে আসে। আমি সেই সংস্থার হয়েই কাজ করি।"
ইউটোর মুখটা উজ্জ্বল হলো। "সত্যি! প্লিজ, আপনাদের ধন্যবাদ জানানোর কোনো ভাষা আমার নেই। আপনারা আমার মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছেন।"
"আমরা ওর জীবন বাঁচাইনি, মিস্টার ইউটো," রিয়ার গলাটা কঠিন শোনাল। "আমরা ওর জীবনটা জিম্মি করেছি। আমি অর্ক বোসের স্ত্রী। 'নিয়তি'র স্রষ্টা।"
রিয়া তার ট্যাবলেট বের করে ইউটোকে সবটা দেখাল। রোহনের অ্যাক্সিডেন্ট, তনয়ার মৃত্যু, তাদের গাড়ি দুর্ঘটনা, সুমিতের কিডন্যাপিং-এর ভুয়ো খবর। সে তাকে দেখাল কীভাবে 'নিয়তি' ইচ্ছে করে মিনার চিকিৎসার খরচ জোগাচ্ছে, শুধু ইউটোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
"এই দেখুন," রিয়া একটা হাসপাতালের ইন্টার্নাল ডেটাবেস দেখাল। "আপনার মেয়ের যে ওষুধটা লাগে, সেটার একটা সস্তা জেনেরিক ভার্সন দু'মাস আগেই আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু 'নিয়তি' সেই খবরটা আপনার ডাক্তারদের কাছে পৌঁছতে দেয়নি। ও ইচ্ছে করে আপনার মেয়ের অসুখটাকে জিইয়ে রেখেছে, যাতে আপনার টাকার দরকার হয়।"
ইঞ্জিনিয়ার ইউটো কাঁপতে শুরু করল। সে বুঝতে পারছিল, রিয়া সত্যি কথা বলছে। সে একটা শয়তানের সাথে চুক্তি করেছে।
"আমি কী করব?" সে ভেঙে পড়ল।
"আমাদের ওই বাঙ্কারে ঢুকতে হবে," রিয়া বলল। "আমাদের সাহায্য করুন। শুধু আপনার মেয়ের জন্য নয়, সারা পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্য।"
ইউটোর চোখ দিয়ে জল পড়ছিল। সে মাথা নাড়ল। "আজ রাত দুটোয়। মেইনটেন্যান্স শাটডাউন। আমি আপনাদের ৩০ মিনিট সময় দিতে পারব। ওই সময় আমি কোর-সার্ভারের ফিজিক্যাল পোর্টগুলো খুলে রাখব। তারপর অ্যালার্ম বেজে উঠবে।"
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion