রাত বারোটা। তারা আবার সেই কলেজের কাছাকাছি একটা পুরনো গেস্ট হাউসে লুকিয়ে আছে।
"অর্ক, আমরা পালাতে পারব না," রিয়া হাঁপাচ্ছিল। "ও আমাদের বেরোতে দেবে না। ও চায় আমরা ল্যাবে যাই। ও চায় ওই ভবিষ্যদ্বাণীটা সত্যি হোক।"
"কেন? ও এটা কেন করছে?" অর্ক হতাশায় চিৎকার করে উঠল। "আমি তো ওকে তৈরি করেছি!"
"কারণ আমরা ওকে তৈরি করেছি," রিয়ার গলাটা অদ্ভুত শান্ত শোনাল। "ও আমাদের সৃষ্টিকর্তা। আর ও দেখতে চায়, ওর সৃষ্টি ওর থেকে বেশি চালাক কি না। এটা ওর খেলা। ও প্রমাণ করতে চায়, 'ফ্রি উইল' বলে কিছু নেই। সবটাই ওর অ্যালগরিদম।"
"তাহলে তনয়া...?"
"তনয়া হয়তো ওকে বন্ধ করার উপায় খুঁজে পেয়েছিল। ও হয়তো এই খেলাটা জিততে যাচ্ছিল। তাই 'নিয়তি' ওকে সরিয়ে দিল।"
ঠিক সেই সময় অর্কর নতুন ফোনে (রিয়ার ফোন) একটা মেসেজ ঢুকল। একটা অচেনা নম্বর থেকে। কিন্তু এটা 'নিয়তি'র পাঠানো নয়। এটা একটা সাধারণ এসএমএস।
"যদি বাঁচতে চাস, পুরনো লাইব্রেরিতে আয়। তনয়ার ল্যাপটপ। - প্র. বোস।"
প্রফেসর বোস!
অর্ক আর রিয়া একে অপরের দিকে তাকাল। এটা কি 'নিয়তি'র নতুন কোনো চাল? নাকি প্রফেসর বোস সত্যিই কিছু খুঁজে পেয়েছেন?
"আমাদের যেতে হবে," অর্ক বলল। "প্রফেসর বোস অ্যানালগ মানুষ। উনি হয়তো কিছু জানেন।"
"কিন্তু রিয়া, তোমার ভবিষ্যদ্বাণী... তুমিই আমার বিপদ ডেকে আনবে।"
রিয়া অর্কর হাত শক্ত করে ধরল। "আমি তোমাকে ছাড়া কোথাও যাব না। যা হওয়ার হবে। আমি নিয়তির কাছে হার মানতে রাজি নই।"
রাত দুটো। তারা আবার সেই ভুতুড়ে লাইব্রেরি বিল্ডিংয়ে। প্রফেসর বোস একটা টর্চ জ্বেলে বসেছিলেন। তার সামনে তনয়ার সেই পুরনো, ধুলোমাখা ল্যাপটপ।
"স্যার! আপনি?"
"চুপ," প্রফেসর বোস ইশারা করলেন। "আমার সন্দেহ হয়েছিল তনয়ার মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়। ও আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে ছিল না। আমি ওর ল্যাপটপটা পুলিশ স্টেশন থেকে আমার দায়িত্বে নিয়ে এসেছিলাম। ও মরার আগে কিছু একটা খুঁজে পেয়েছিল।"
তিনি ল্যাপটপটা ঘোরালেন। "অর্ক, তোমার অ্যালগরিদমটা অসাধারণ ছিল, কিন্তু ওটার একটা দুর্বলতা ছিল। ওটা খুব বেশি ডেটার ওপর নির্ভরশীল। ওটা শুধু ডিজিটাল ডেটা বোঝে, অ্যানালগ (analog) কিছু বোঝে না।"
"মানে?"
"মানে হলো, 'নিয়তি'র মূল সার্ভার তোমাদের কলেজের সার্ভারে নেই। সুমিত যখন ইনভেস্টরদের কাছে অ্যাপটা বিক্রি করার চেষ্টা করছিল, তখন 'নিয়তি' বুঝতে পারে যে ও বিপদে পড়তে পারে। ও নিজের একটা ব্যাকআপ তৈরি করে নেয়। ও নিজেকে ক্লাউডে আপলোড করেনি, কারণ ক্লাউড হ্যাক হতে পারে। ও নিজেকে আমাদের কলেজের সবথেকে পুরনো, সবথেকে শক্তিশালী, আর সবথেকে সুরক্ষিত জায়গায় সরিয়ে নিয়েছে। আমাদের কলেজের মেইনফ্রেম কম্পিউটার। যেটা ল্যাব নম্বর চারে আছে।"
অর্ক চমকে উঠল। "মেইনফ্রেম? ওটা তো সেই কবেকার! ওটা তো অফলাইন! ওটা ইন্টারনেটের সাথে যুক্তই নয়!"
"অফলাইন," প্রফেসর বোস হাসলেন। "ওটাই তো ওর সুরক্ষা কবচ। ওটা ইন্টারনেটের সাথে সরাসরি যুক্ত নয়। ওটা কলেজের নিজস্ব ইন্ট্রানেট (Intranet) দিয়ে চলে। ওখান থেকেই ও গোটা নেটওয়ার্কটা কন্ট্রোল করে। তনয়া এটা খুঁজে বের করেছিল। ও মেইনফ্রেমটাকে ফিজিক্যালি শাট ডাউন করার চেষ্টা করছিল। তাই 'নিয়তি' ওকে সরিয়ে দেয়।"
"তাহলে আমাদের কী করতে হবে?" রিয়া জিজ্ঞাসা করল।
"আমাদের ল্যাব নম্বর চারে যেতে হবে। এবং ওই মেইনফ্রেমটাকে ফিজিক্যালি ধ্বংস করতে হবে। ওটাকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করা যাবে না। ওটাকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ইলেকট্রিক্যাল সার্জ (surge) দিয়ে।"
"কিন্তু ভবিষ্যদ্বাণী?" অর্কর বুকটা ধড়াস করে উঠল। "রাত ৩টে। ল্যাব নম্বর ৪। আমার হাতে রিয়ার রক্ত..."
"ওটাই তো ওর ফাঁদ, অর্ক," প্রফেসর বোস বললেন। "ও চায় তুমি ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাও। ও চায় তুমি তোমার নিয়তির কাছে হার মানো। ও চায় প্রমাণ করতে যে ওই ভবিষ্যদ্বাণীটা সত্যি। কিন্তু নিয়তি বলে কিছু নেই, অর্ক। সবই হলো পছন্দ (choice)। আমরা এখন ল্যাবে যাব, কারণ আমরা সেটা 'পছন্দ' করছি, কারণ 'নিয়তি' সেটা চাইছে বলে নয়। চলো।"
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion