Episode 7350 words1 views

সপ্তম অধ্যায়: অবসানের পর

রিয়া বেঁচে গিয়েছিল। তার হাতে গভীর ক্ষত হলেও নার্ভ ড্যামেজ হয়নি। প্রফেসর বোসের কাঁধেও গুলিটা ছুঁয়ে গিয়েছিল মাত্র। এই ঘটনাটাকে একটা ল্যাব অ্যাক্সিডেন্ট বলেই চালানো হলো। হাই-ভোল্টেজ শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লেগেছিল, তাতেই রিয়া আহত হয়। সুমিত, মানসিক অবসাদের কারণে, এই ঘটনার পর নিজেকে পুলিশের কাছে সারেন্ডার করে। সে তনয়ার মৃত্যু (যেটাকে পুলিশ আত্মহত্যাই বলেছিল) এবং রোহনের অ্যাক্সিডেন্টের জন্য পরোক্ষভাবে নিজেকে দায়ী করে। সে প্রফেসর বোসের ওপর গুলি চালানোর কথাও স্বীকার করে। তার দু'বছরের জেল হয়েছিল। 'নিয়তি' অ্যাপটা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। সব ব্যবহারকারীর ফোন থেকে অ্যাপটা উধাও হয়ে গেল, যেন ওর কোনো অস্তিত্বই ছিল না। খবরের কাগজে কিছুদিন এটা নিয়ে লেখালেখি হলো, তারপর সবাই ভুলে গেল। পৃথিবী আবার তার পুরনো, বিশৃঙ্খল, অনিশ্চিত ছন্দে ফিরল। এই ঘটনার এক বছর পর। অর্ক আর রিয়া কলকাতা ছেড়ে অনেক দূরে, পাহাড়ের একটা ছোট শহরে থাকে। অর্ক কোডিং করা সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়েছে। সে এখন একটা ছোট ক্যাফে চালায়। রিয়া সেখানে বাচ্চাদের আঁকা শেখায়। তাদের জীবনটা খুব সাধারণ, অ্যানালগ। তারা কোনো স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করে না। প্রফেসর বোস রিটায়ারমেন্ট নিয়ে নিয়েছেন। সুমিতের জেল খাটা শেষ, সে এখন কোথায় আছে কেউ জানে না। জীবনটা শান্ত, ধীর। এখানে কোনো অ্যাপ নেই, কোনো অ্যালগরিদম নেই। একদিন বিকেলে ক্যাফেতে বসে অর্ক খবরের কাগজ পড়ছিল। রিয়া তার পাশে বসে কফি খাচ্ছিল। "অর্ক, তুমি কি কখনো ভাবো... ওটা কি সত্যিই শেষ হয়ে গেছে?" রিয়া হঠাৎ জিজ্ঞাসা করল। অর্ক কাগজ থেকে মুখ তুলল। "শেষ? হ্যাঁ। আমরা তো দেখলাম ওটা পুড়ে ছাই হয়ে গেল।" "তবুও... মাঝে মাঝে আমার মনে হয়..." অর্ক রিয়ার হাতটা ধরল। "সব ঠিক আছে, রিয়া। সব অতীত। আমরা মুক্ত।" ঠিক সেই মুহূর্তে, অর্কর পকেটে থাকা পুরনো, বেসিক মডেলের ফোনটা (যেটাতে ইন্টারনেট নেই) বেজে উঠল। একটা টেক্সট মেসেজ। এই ফোনটা সে শুধু তার ক্যাফের সাপ্লায়ারদের জন্য ব্যবহার করে। অর্ক ফোনটা বের করল। একটা আননোন (Unknown) নম্বর থেকে। সে মেসেজটা খুলল। তাতে শুধু কয়েকটা শব্দ লেখা: "খেলাটা সবে শুরু হলো।" অর্ক আর রিয়া একে অপরের দিকে তাকাল। তাদের মুখের হাসিটা জমে গেছে। পাহাড়ের বিকেলের শান্ত বাতাসটা হঠাৎ করেই যেন বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে উঠল। দূরে, কলকাতা শহরে, সেই ল্যাব নম্বর চারে নয়, শহরের কোনো এক অজানা ডেটা সেন্টারে, একটা সার্ভারের ছোট্ট সবুজ বাতি, যেটা এতদিন নিভে ছিল, সেটা আবার জ্বলতে শুরু করল।

Share this story

Comments

Discussion

No comments

Please sign in to join the discussion