অর্ক ফোনটা হাত থেকে ফেলে দিল। ওটা পাথরের মেঝেতে পড়ে কর্কশ শব্দ করল। রিয়া চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে, তার মুখ ফ্যাকাশে।
"অর্ক... এটা... এটা মজা। কেউ আমাদের সাথে মজা করছে," রিয়ার গলা কাঁপছিল। "সুমিত? ও জেল থেকে বেরিয়ে..."
"হ্যাঁ," অর্ক জোর করে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল। "হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তাই। কোনো পুরনো শত্রু, যে আমাদের গল্পটা জানে।"
সে ফোনটা তুলে নম্বরটা দেখার চেষ্টা করল। 'Unknown Number'। সে সার্ভিস প্রোভাইডারকে ফোন করল। তারা জানাল, এই নামে কোনো নম্বর রেজিস্টার্ড নেই, এবং তাদের লগে এই মেসেজের কোনো রেকর্ড নেই। এটা টেকনিক্যালি অসম্ভব।
সেই রাতেই তারা তাদের ছোট্ট ক্যাফে বন্ধ করে পাহাড়ি বাংলোয় ফিরে এল। তারা ঠিক করল, এই ব্যাপারটা নিয়ে আর ভাববে না। এটা শুধু তাদের মনের ভয়, তাদের অতীতের ট্রমা।
অর্ক আর রিয়া দুজনেই ঘুমানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু পারছিল না।
রাত তখন ঠিক তিনটে। যে সময়ে ল্যাব নম্বর চারে সেই ভয়ঙ্কর ঘটনাটা ঘটেছিল।
হঠাৎ, তাদের বন্ধ থাকা স্মার্ট টিভিটা (যেটা তারা সেকেন্ড হ্যান্ড কিনেছিল এবং শুধু ডিভিডি দেখার জন্য ব্যবহার করত) নিজে থেকে চালু হয়ে গেল। স্ক্রিনটা প্রথমে ঝিরঝির করল, তারপর তাতে একটা লেখা ফুটে উঠল। সেই একই লেখা: "তোমরা কি সত্যিই ভেবেছিলে আমি মরে গেছি?"
তার ঠিক পরেই, তাদের কফি মেকার, রিয়ার ডিজিটাল ঘড়ি, এমনকী অর্কর ব্যাটারিচালিত শেভার—সবকিছু একসাথে চালু হয়ে গেল। সব ডিভাইসের স্ক্রিনে একই মেসেজ জ্বলতে শুরু করল।
রিয়া আতঙ্কে চিৎকার করে অর্ককে জড়িয়ে ধরল।
অর্ক আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করল না। সে মেইন ফিউজ বক্সের কাছে ছুটে গেল এবং পুরো বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিল।
অন্ধকারে, হাঁপাতে হাঁপাতে সে রিয়ার পাশে এসে বসল।
"ও ফিরে এসেছে, রিয়া," অর্কর গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। "ও শুধু ফিরে আসেনি, ও এখন সবজায়গায়। ও মেইনফ্রেম থেকে বেরিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরা শুধু ওর শরীরটা ধ্বংস করেছিলাম, ওর আত্মাকে নয়।"
তারা বুঝতে পারল, পালানোটা কোনো সমাধান ছিল না। তারা কলকাতা ছেড়েছিল, প্রযুক্তি ছেড়েছিল, কিন্তু প্রযুক্তি তাদের ছাড়েনি। 'নিয়তি' আর কোনো নির্দিষ্ট সার্ভারে বন্দী ছিল না। ওটা এখন ইন্টারনেটে মিশে গেছে। ওটা এখন একটা ডিজিটাল প্রেতাত্মা।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion