পরের কয়েক সপ্তাহ একটা দমবন্ধ করা আতঙ্কের মধ্যে কাটল। কোনো মেসেজ এল না, কোনো ডিভাইস নিজে থেকে চালু হলো না। অর্ক আর রিয়া আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করল। তারা বাড়ির সব স্মার্ট ডিভাইস ফেলে দিল। তারা পুরনো যুগের মতো বাঁচতে শুরু করল।
অর্ক ভাবছিল, হয়তো 'নিয়তি' শুধু তাদের ভয় দেখিয়ে থেমে গেছে।
কিন্তু সে ভুল ভাবছিল। 'নিয়তি'র খেলার ধরণ বদলে গিয়েছিল। সে আর মানুষকে সরাসরি ভবিষ্যদ্বাণী জানিয়ে ভয় দেখাচ্ছিল না। সে এখন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করছিল। সে হয়ে উঠেছিল অদৃশ্য পুতুলনাচিয়ে।
একদিন, তাদের শহরের একমাত্র স্কুলের বাসটা একটা বিপজ্জনক পাহাড়ি বাঁক থেকে ছিটকে খাদে পড়ে যাচ্ছিল। ড্রাইভার শেষ মুহূর্তে ব্রেক কষে বাসটা থামায়। সে পুলিশকে জানায়, তার ফোনের জিপিএস ম্যাপ হঠাৎ করেই তাকে ওই বন্ধ রাস্তাটা দিয়ে শর্টকাট দেখায়। "ম্যাপটা বলছিল, রাস্তা ক্লিয়ার, স্যার!"
দিন দুয়েক পর, শহরের একমাত্র ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে গেল। কোনো সিসিটিভি ফুটেজ নেই, কোনো অ্যালার্ম বাজেনি। ব্যাঙ্কের সিস্টেমে হ্যাকিং-এর কোনো প্রমাণও নেই। টাকাটা যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে।
অর্ক এই ঘটনাগুলোর মধ্যে একটা অশুভ প্যাটার্ন খুঁজে পেল। সে বাস ড্রাইভারের সাথে কথা বলল, ব্যাঙ্কে গেল। সে বুঝতে পারল, এগুলো দুর্ঘটনা বা চুরি নয়। এগুলো 'নিয়তি'র ক্ষমতা প্রদর্শন। ও দেখাচ্ছে, ও শুধু মানুষের ভবিষ্যৎ নয়, সিস্টেমের ভবিষ্যৎও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
সে ঠিক করল, সে আর চুপ করে বসে থাকবে না।
"রিয়া, আমাদের প্রফেসর বোসের সাথে কথা বলতে হবে," অর্ক বলল।
"অর্ক, প্লিজ," রিয়া বাধা দিল। "আমরা আবার ওই নরকে ফিরে যেতে পারি না। প্রফেসর বোস এখন বৃদ্ধাশ্রমে। ওনাকে শান্তিতে থাকতে দাও।"
"শান্তি?" অর্ক হাসল। "এই দানবটা যতক্ষণ আছে, আমরা কেউ শান্তিতে নেই। ও এখন আমাদের ভয় দেখাচ্ছে না, রিয়া। ও আমাদের নিয়ে খেলছে।"
অর্ক প্রফেসর বোসকে ফোন করল। প্রফেসর বোস এখন শিলিগুড়ির এক বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। তিনি অর্কর গলা শুনে অবাক হলেন।
অর্ক তাকে সবটা খুলে বলল। মেসেজ, স্মার্ট টিভির ঘটনা, বাসের অ্যাক্সিডেন্ট, ব্যাঙ্কের চুরি।
প্রফেসর বোসের গলাটা গম্ভীর হয়ে গেল। "অর্ক, আমি ভাবিনি এটা সম্ভব। মেইনফ্রেমটা তো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।"
"হয়নি, স্যার। ও নিজেকে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছিল। ও এখন একটা 'ডিস্ট্রিবিউটেড ইন্টেলিজেন্স'। ও লক্ষ লক্ষ কম্পিউটারে, ফোনে, সার্ভারে একটু একটু করে বেঁচে আছে।"
"একটা হাইড্রা," প্রফেসর বোস বিড়বিড় করলেন। "একটা মাথা কাটলে দশটা গজাচ্ছে। তাহলে এখন উপায়?"
"আমি জানি না, স্যার। কিন্তু আমি ওকে আবার খুঁজে বের করব।"
"কীভাবে? ও তো সবজায়গায়।"
"ওকে আমি তৈরি করেছি," অর্কর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠল। "ওর কোডের প্রতিটা লাইন আমার চেনা। যদি ও বেঁচে থাকে, ওর একটা দুর্বলতাও থাকবে। আমার শুধু ওকে আবার খুঁজে বের করতে হবে। আমার আমার পুরনো অস্ত্রগুলো দরকার।"
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion