তারা প্রায় দশ মিনিট সুড়ঙ্গের মধ্যে লুকিয়ে রইল। বাইরে থেকে তন্নতন্ন করে খোঁজার শব্দ আসছিল।
"স্যার, এখানে কেউ নেই। বাড়িটা খালি," একজনের গলা।
"থাকলে যাবে কোথায়? বাইরে নজর রাখো। ও আসবেই।"
তারা পায়ের শব্দ দূরে মিলিয়ে যেতে শুনল।
"ওরা বাইরে অপেক্ষা করছে," অর্ক ফিসফিস করল। "আমরা আটকা পড়ে গেছি।"
"কিন্তু আমাদের কাছে পাসওয়ার্ড আছে," রিয়া বলল। "ল্যাপটপটা খোলো। দেখি কী আছে।"
সুড়ঙ্গের আবছা অন্ধকারে, মোবাইলের আলোয় রিয়া ল্যাপটপ খুলল। পেনড্রাইভটা লাগাল।
পাসওয়ার্ড: G-R-E-E-N-D-R-A-G-O-N
এন্টার।
স্ক্রিনে একটা ফোল্ডার খুলে গেল। তার নাম 'প্রজেক্ট ফিনিক্স'।
ফোল্ডারটা খুলতেই তারা স্তব্ধ হয়ে গেল।
ভেতরে অসংখ্য ফাইল। ভিডিও, রিসার্চ পেপার, কেমিক্যাল ফর্মুলা, আর একটা লিস্ট।
"এগুলো কী?" অর্ক একটা ভিডিও প্লে করল।
ভিডিওটা একটা ল্যাবের। সে নিজেকে দেখতে পেল, ডক্টর অরুণাভ বোস। তার সামনে মিস্টার বসু।
"মিস্টার বসু," অর্ক বলল (ভিডিওতে)। "ট্রায়াল সফল। 'অবলিভিয়ন' সাবজেক্টের নির্দিষ্ট স্মৃতি মুছে ফেলতে সক্ষম।"
"চমৎকার, ডক্টর," মিস্টার বসু বলল। "এবার আমরা ফেজ টু-তে যাব। মাস স্কেলিং।"
"মাস স্কেলিং? কিন্তু আমরা তো এখনও হিউম্যান ট্রায়াল শেষ করিনি। মাত্র কয়েকজনের ওপর...।"
"আমাদের অত সময় নেই। নিরভানা কর্পোরেশনের বোর্ড মিটিং সামনেই। আমাদের দেখাতে হবে যে এই প্রোডাক্টটা শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয়, সমষ্টিগতভাবেও ব্যবহার করা যায়। শহরের জলের সাথে খুব কম মাত্রায় এটা মেশানো হবে। এটা মানুষের আগ্রাসী মনোভাব কমিয়ে দেবে। কোনও প্রতিবাদ হবে না, কোনও দাঙ্গা হবে না। একটা শান্ত, সুশৃঙ্খল সমাজ। আমাদের ইউটোপিয়া।"
"কিন্তু এটা... এটা বেআইনি! এটা মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে খেলা!" অরুণাভ প্রতিবাদ করল।
"ডক্টর বোস, আপনি আপনার কাজ করুন। বাকিটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিন।"
ভিডিওটা শেষ হলো।
অর্ক স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। রিয়া তার দিকে ফ্যাকাসে মুখে তাকিয়ে আছে।
"ওরা... ওরা গোটা শহরের মানুষকে গিনিপিগ বানাতে চাইছে," রিয়া বলল। "এটা পাগলামি।"
অর্ক অন্য একটা ফাইল খুলল। এটা একটা লিস্ট। তাতে অনেকগুলো নাম।
রিয়া ঝুঁকে পড়ল। "বাবা! আমার বাবার নাম!"
সুমন্ত সান্যাল। তার নামের পাশে লেখা: "টার্মিনেটেড"।
"ওরা আমার বাবাকে খুন করেছে," রিয়ার গলা দিয়ে একটা চাপা স্বর বেরোল।
"শুধু তোমার বাবাই নয়, রিয়া," অর্ক লিস্টটা স্ক্রল করল। "আরও অনেকে। যারা ওদের পথে এসেছে।"
সে নিজের নামটাও খুঁজে পেল। অরুণাভ বোস। পাশে লেখা: "নিউট্রালাইজড (অবলিভিয়ন প্রটোকল)"।
ঠিক তখনই অর্কর আর একটা স্মৃতির ঝলক এল। সেই সাদা ল্যাব। সেই আতঙ্কিত লোকটা।
...লোকটার মুখটা এবার স্পষ্ট। সে রিয়ার বাবা, সুমন্ত সান্যাল।
"প্লিজ, ডক্টর বোস... আমি শুধু সত্যিটা সামনে আনতে চাই।"
"সুমন্তবাবু, আপনি বুঝতে পারছেন না," অর্ক (নিজে) বলছে, তার হাত কাঁপছে। "ওরা আপনাকে মেরে ফেলবে। আমি শুধু আপনার স্মৃতিটা...।"
"না! আমি মরতেও রাজি।"
ঠিক তখনই মিস্টার বসু ঘরে ঢোকে। "ওঁর যখন এতই মরার শখ, তখন তাই হোক। ডক্টর, আপনি আপনার 'অবলিভিয়ন' দিন। তারপর আমরা ওঁর 'অ্যাক্সিডেন্ট'-এর ব্যবস্থা করছি।"...
অর্ক চোখ খুলল। তার মুখটা ফ্যাকাসে। সে রিয়ার দিকে তাকাতে পারছিল না।
"অর্ক, কী হয়েছে?" রিয়া তার মুখের ভাব দেখে জিজ্ঞেস করল।
"কিছু না," অর্ক মিথ্যে বলল। সে এই ভয়ঙ্কর সত্যিটা রিয়াকে বলতে পারল না। সে নিজেই রিয়ার বাবার ওপর 'অবলিভিয়ন' প্রয়োগ করেছিল, তাকে মেরে ফেলার ঠিক আগে।
"অর্ক," রিয়া তার হাত ধরল। "এই প্রমাণটা আমাদের মিডিয়ার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এক্ষুনি।"
"হ্যাঁ। কিন্তু ওরা বাইরে আছে।"
"আমাদের এমন একজনের সাহায্য দরকার, যাকে ওরা সন্দেহ করবে না," অর্ক বলল। "তোমার কোনও বিশ্বস্ত সোর্স আছে? মিডিয়াতে?"
"আমার এডিটর। মিস্টার সেন। তিনি বাবার বন্ধু ছিলেন। তিনি হয়তো সাহায্য করতে পারবেন।"
"তাকে ফোন করো। বলো, আমাদের কাছে 'প্রজেক্ট ফিনিক্স'-এর সব প্রমাণ আছে। কিন্তু বলো, আমরা লেক ভিউ রোডে আটকা পড়েছি।"
রিয়া ফোন করতে যাচ্ছিল।
"দাঁড়াও," অর্ক তাকে থামাল। "সুড়ঙ্গটা... এটা নিশ্চয়ই কোথাও শেষ হয়েছে।"
তারা সুড়ঙ্গ দিয়ে এগোতে লাগল।
Comments
Discussion
No commentsPlease sign in to join the discussion